পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বউ-ঠাকুরানীর হাট \ՆԳ Գ কৱিলে সে কিছু বলে না, কেবল দিনে দিনে তাহার শরীর ক্ষয় হইয়া যাইতেছে। তাহাকে লইয়া যে আমি কী করিব কিছু ভাবিয়া পাই না ।” বসন্ত রায় অত্যন্ত ব্যাকুল হইয়া পড়িলেন । “এই দেখুন কাকমহাশয়, এক সর্বনেশে চিঠি আসিয়াছে।” বলিয়া এক চিঠি বসন্ত রায়ের হাতে দিলেন । বসন্ত রায় সে চিঠি পড়িতে না পড়িতে মহিষী কাদিয়া বলিতে লাগিলেন, “আমার আর কিসের সুখ আছে ? উদয়— বাছা আমার কিছু জানে না । তাহাকে তো মহারাজ- সে যেন রাজার মতোই হয় নাই, কিন্তু তাহাকে তো আমি গর্ভে ধারণ করিয়াছিলাম, সে তো আমার আপনার সন্তান বটে । জানি না, বাছা সেখানে কী করিয়া থাকে, একবার আমাকে দেখিতেও দেয় না ।” মহিষী আজকাল যে কথাই পাড়েন, উদয়াদিত্যের কথা তাহার মধ্যে এক স্থলে আসিয়া পড়ে । ঐ কষ্টটাই তাহার প্রাণের মধ্যে যেন দিনরাত জাগিয়া আছে । চিঠি পড়িয়া বসন্ত রায় একেবারে অবাক হইয়া গেলেন, চুপ করিয়া বসিয়া মাথায় হাত বুলাইতে লাগিলেন । কিয়ৎক্ষণ পরে বসন্ত রায় মহিষীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ চিঠি তো কাহাকেও দেখাও न् िभो !' মহিষী কহিলেন, “মহারাজ এ চিঠির কথা শুনিলে কি আর রক্ষা রাখিবেন, বিভাও কি তাহা হইলে বসন্ত রায় কহিলেন, “ভালো করিয়াছ। এ চিঠি আর কাহাকেও দেখাইয়ো না, বউমা ! তুমি বিভাকে শীঘ্ৰ তাহার শ্বশুরবাড়ি পাঠাইয়া দাও । মান-অপমানের কথা ভাবিয়ো না !” মহিষী কহিলেন, “আমিও তাঁহাই মনে করিয়াছি । মান লইয়া আমার কাজ নাই, আমার বিভা সুখী হইলেই হইল । কেবল ভয় হয় পাছে বিভাকে তাহারা অযত্ন করে ।” বসন্ত রায় কহিলেন, “বিভাকে অযত্ন করিবে ! বিভা কি অযত্বের ধন ! বিভা যেখানে যাইবে সেইখানেই আদর পাইবে । অমন লক্ষ্মী আমন সোনার প্রতিমা আর কোথায় আছে । রামচন্দ্ৰ কেবল তোমাদের উপর রাগ করিয়াই এই চিঠি লিখিয়াছে, আবার পাঠাইয়া দিলেই তাহার রাগ পড়িয়া যাইবে ।” বসন্ত রায় তাহার সরল হৃদয়ে সরল বুদ্ধিতে এই বুঝিলেন । মহিষীও তাঁহাই বুঝিলেন । বসন্ত রায় কহিলেন, “বাড়িতে রাষ্ট্র করিয়া দাও যে, বিভাকে চন্দ্ৰদ্বীপে পাঠাইতে অনুরোধ করিয়া রামচন্দ্ৰ এক চিঠি লিখিয়াছে। তাহা হইলে বিভা নিশ্চয়ই সেখানে যাইতে আর অমত করিবে না ।” উনত্রিংশ পরিচ্ছেদ সন্ধ্যার পর বসন্ত রায় একাকী বহির্বাটীতে বসিয়া আছেন । এমন সময়ে সীতারাম তাহাকে আসিয়া প্ৰণাম করিল | বসন্ত রায় তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কী সীতারাম, কী খবর ?” সীতারাম কহিল, “সে পরে বলিব, আপনাকে আমার সঙ্গে আসিতে হইবে।” বসন্ত রায় কহিলেন, “কেন, কোথায় সীতারাম ?” সীতারাম তখন কাছে আসিয়া বসিল । চুপি চুপি ফিস ফিস করিয়া কী বলিল ! বসন্ত রায় চক্ষু সীতারাম কহিল, “আজ্ঞা হা মহারাজ ।” বসন্ত রায় মনে মনে অনেক ইতস্তত করিতে লাগিলেন । কহিলেন, “এখনই যাইতে হইবে নাকি ৷” সীতারাম। আজ্ঞা হা । বসন্ত রায় । একবার বিভার সঙ্গে দেখা করিয়া আসিব না ।