পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বউ-ঠাকুরানীর হাট Vobr@ গিয়া তাহদের খুঁজিয়া বাহির করিয়া দিব । তোমার রাজবাড়ির চাকররা সব ভেড়া, উহারা এ কাজ করিবে না ।” প্রতাপাদিত্য রুক্সিণীর সহিত লোক দিতে আদেশ করিলেন ও প্রহরীদিগের প্রতি যথাবিহিত শাস্তির বিধান করিলেন । একে একে সভাগৃহ শূন্য হইয়া গেল । কেবল মন্ত্রী ও মহারাজ অবশিষ্ট রহিলেন । মন্ত্রী মনে করিলেন, মহারাজ অবশ্য র্তাহাকে কিছু বলিবেন । কিন্তু প্রতাপাদিত্য কিছুই বলিলেন না, “মহারাজ ।” মহারাজ তাহার কোনো উত্তর করিলেন না ! মন্ত্রী ধীরে ধীরে উঠিয়া গেলেন । সেইদিনই সন্ধ্যার পূর্বে প্রতাপাদিত্য একজন জেলের মুখে উদয়াদিত্যের পলায়ন-সংবাদ পাইলেন । নীেকা করিয়া নদী বাহিয়া উদয়াদিত্য চলিয়াছিলেন, সে তাহাকে দেখিয়াছিল । ক্রমে ক্রমে অন্যান্য নানা লোকের মুখ হইতে সংবাদ পাইতে লাগিলেন । রুক্সিণীর সহিত যে লোকেরা গিয়াছিল তাহারা এক সপ্তাহ পরে ফিরিয়া আসিয়া কহিল, যুবরাজকে রায়গড়ে দেখিয়া আসিলাম । রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন, “সেই স্ত্রীলোকটি কোথায় ?” তাহারা কহিল, “ সে আর ফিরিয়া আসিল না, সে সেইখানেই রহিল ।” তখন প্রতাপাদিত্য মুক্তিয়ার খা নামক র্তাহার এক পাঠান সেনাপতিকে ডাকিয়া তাহার প্রতি গোপনে কী একটা আদেশ করিলেন । সে সেলাম করিয়া চলিয়া গেল । দ্বাত্রিংশ পরিচ্ছেদ প্রতাপাদিত্যের পূর্বেই মহিষী ও বিভা উদয়াদিত্যের পলায়ন-সংবাদ অবগত হইয়াছিলেন। উভয়েই ভয়ে অভিভূত হইয়া ভাবিতেছিলেন যে, মহারাজ যখন জানিতে পরিবেন, তখন না জানি কী করিবেন । প্ৰতিদিন মহারাজ যখন এক-একটি করিয়া সংবাদ পাইতেছিলেন, আশঙ্কায় উভয়ের প্রাণ ততই আকুল হইয়া উঠিতেছিল। এইরূপে সপ্তাহ গেল, অবশেষে মহারাজ বিশ্বাসযোগ্য যথার্থ সংবাদ পাইলেন। কিন্তু তিনি কিছুই করিলেন না। ক্রোধের আভাসমােত্র প্রকাশ করিলেন না । মহিষী আর সংশয়ে থাকিতে না পারিয়া একবার প্রতাপাদিত্যের কাছে গেলেন । কিন্তু অনেকক্ষণ উদয়াদিত্য সম্বন্ধে কোনো কথা জিজ্ঞাসা করিতে সাহস করিলেন না । মহারাজও সে-বিষয়ে কোনো কথা উত্থাপিত করিলেন না । অবশেষে আর থাকিতে না পারিয়া মহিষী বলিয়া উঠিলেন, “মহারাজ, আমার গুড়ঙ্গ রাখে, এবার উদয়কে মাপ করে। বাছাক আরো যদি কষ্ট দাও। তবে আমি বিষ খাইয়া রব ।” প্রতাপাদিত্য ঈষৎ বিরক্তিভাবে কহিলেন, “আগে হইতে যে তুমি কঁদিতে বসিলে ! আমি তো কিছুই করি নাই।” ” পাছে প্রতাপাদিত্য আবার সহসা বাকিয়া দাঁড়ান এই নিমিত্ত মহিষী। ও-কথা আর দ্বিতীয় বার উত্থাপিত করিতে সাহস করিলেন না । ভীত মনে ধীরে ধীরে চলিয়া আসিলেন । একদিন, দুইদিন, তিনদিন গেল, মহারাজের কোনোপ্রকার ভাবান্তর লক্ষিত হইল না । তাহাই দেখিয়া মহিষী ও বিভা আশ্বস্তা হইলেন । মনে করিলেন, উদয়াদিত্য স্থানান্তরে যাওয়ায় মহারাজ মনে মনে বুঝি সন্তুষ্ট হইয়াছেন । এখন কিছুদিনের জন্য মহিষী একপ্রকার নিশ্চিন্ত হইতে পারিলেন । ইতিপূর্বেই মহিষী বিভাকে বলিয়াছেন ও বাড়িতে রাষ্ট্র করিয়া দিয়াছেন যে বিভাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাইতে অনুরোধ করিয়া রামচন্দ্র রায় এক পত্র লিখিয়াছেন । বিভার মনে আর আহলাদ ধরে না । রামমোহনকে বিদায় করিয়া অবধি বিভার মনে আর এক মুহুর্তের জন্য শান্তি ছিল না । যখনই সে অবসর পাইত তখনই ভাবিত ‘তিনি কী মনে করিতেছেন ? তিনি কি আমার অবস্থা ঠিক বুঝিতে পারিয়াছেন ? হয়তো তিনি রাগ করিয়াছেন । র্তাহাকে বুঝাইয়া বলিলে তিনি আমাকে কি মাপ