রাজর্ষি প্ৰথম পরিচ্ছেদ ভুবনেশ্বরী মন্দিরের পাথরের ঘাট গোমতী নদীতে গিয়া প্রবেশ করিয়াছে। ত্রিপুরার মহারাজা গোবিন্দমাণিক্য একদিন গ্ৰীষ্মকালের প্রভাতে স্নান করিতে আসিয়াছেন, সঙ্গে তাহার ভাই নক্ষত্ররায়ও আসিয়াছেন । এমন সময় একটি ছোটো মেয়ে তাহার ছোটাে ভাইকে সঙ্গে করিয়া সেই ঘাটে আসিল । রাজার কাপড় টানিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি কে ?” রাজা ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, “মা, আমি তোমার সন্তান ।” মেয়েটি বলিল, “আমাকে পূজার ফুল পাড়িয়া দাও-না।” রাজা বলিলেন, “আচ্ছা, চলো । কুরুগণ অস্থির হইয়া উঠিল। তাহার কহিল,“মহাৰাজ, আপনি কন যাইবেন, আমরা পাড়িয়া "ן রাজা বলিলেন, “না, আমাকে যখন বলিয়াছে আমিই পাড়িয়া দিব ।” রাজা সেই মেয়েটির মুখের দিকে চাহিয়া দেখিলেন । সেদিনকার বিমল উষার সঙ্গে তাহার মুখের সাদৃশ্য ছিল । রাজার হাত ধরিয়া যখন সে মন্দিরসংলগ্ন ফুলবাগানে বেড়াইতেছিল, তখন চারিদিকের শুভ্ৰ বেলফুলগুলির মতো তাহার ফুটুফুটে মুখখানি হইতে যেন একটি বিমল সৌরভের ভাব উথিত হইয়া প্ৰভাতের কাননে ব্যাপ্ত হইতেছিল । ছোটো ভাইটি দিদির কাপড় ধরিয়া দিদির সঙ্গে সঙ্গে বেড়াইতেছিল । সে কেবল একমাত্র দিদিকেই জানে, রাজার সঙ্গে তাহার বড়ো একটা ভাব হইল না । রাজা মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার নাম কী মা ?” মেয়ে বলিল, “হাসি।” রাজা ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার নাম কী ?” ছেলেটি বড়ো বড়ো চোখ মেলিয়া দিদির মুখের দিকে চাহিয়া রহিল, কিছু উত্তর করিল না । হাসি তাহার গায়ে হাত দিয়া কহিল, “বল-না ভাই, আমার নাম তাতা ।” ছেলেটি তাহার অতি ছােটাে দুইখানি ঠোঁট একটুখানি খুলিয়া গভীরভাবে দিদির কথার প্রতিধ্বনির মতো বলিল, “আমার নাম তাতা ।” । বলিয়া দিদির কাপড় আরো শক্ত করিয়া ধরিল। হাসি রাজাকে বুঝাইয়া বলিল, “ও কিনা ছেলেমানুষ, তাই ওকে সকলে তাতা বলে।’ মুঠি হাসিয়া উঠিয়া কহিল,"তাতা মন্দির বলতে পারে না, বলে কােন – আস্থা বল লৰি छाझे ।” ছেলেটি গভীর হইয়া বলিল, “বলাই ।” । হাসি আবার হাসিয়া উঠিয়া কহিল, “তাতা আমাদের কড়াই বলিতে পারে না, বলে বলাই ।” বলিয়া তাহাকে ধরিয়া চুমো খাইয়া খাইয়া অস্থির করিয়া দিল । তাতা সহসা দিদির এত হাসি ও এত আদরের কোনোই কারণ খুঁজিয়া পাইল না, সে কেবল মস্ত চোখ মেলিয়া চাহিয়া রহিল। বাস্তবিকই মন্দির এবং কড়াই শব্দ উচ্চারণ সম্বন্ধে তাতার সম্পূর্ণ ক্রটি ছিল, ইহা অস্বীকার করা যায় না ; তাতার বয়সে হাসি মন্দিরকে কখ, লাদন্দ বলিত না, সে
