পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজর্ষি Գ Տ)ծ খুড়াসাহেব কী একটা বলিতে যাইতেছিলেন, সহসা আত্মসম্বরণ করিয়া কহিলেন, “না, এ দুর্গে সেরূপ কিছুই নাই ।” মুক্তি নিতান্ত আশ্চর্য প্রকাশ করিয়া কছিলেন, "এতবড় দুর্গে একটা সুরঙ্গপথ নাই, এ কেমন কথা। " খুড়াসাহেব কিছু কাতর হইয়া কহিলেন, “নাই, এ কি হইতে পারে ? অবশ্যই আছে, তবে আমরা হয়তো কেহ জানি না ।” রঘুপতি হাসিয়া কহিলেন, “তবে তো না থাকারই মধো । যখন আপনিই জানেন না তখন আর কেই বা জানে ৷” খুড়াসাহেব অত্যন্ত গভীর হইয়া কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন, তার পরে সহসা “হরি হেরাম রাম” বলিয়া তুড়ি দিয়া হাই তুলিলেন, তার পরে মুখে গোফে দাড়িতে দুই-একবার হাত বুলাইয়া হঠাৎ বলিলেন, “ঠাকুর, পূজা-অৰ্চনা লইয়া থাকেন, আপনাকে বলিতে কোনাে দোষ নাই— দুর্গ-প্রবেশের শুধু হইতে বাহির হইবার দুইটা গোপন পথ আছে, কিন্তু বাহিরের কোনো লোককে তাহা দেখানো a রঘুপতি কিঞ্চিৎ সন্দেহের স্বরে কহিলেন, “বটে ! তা হবে।” খুড়াসাহেব দেখিলেন তাহারই দোষ, একবার ‘নাই একবার ‘আছে বলিলে লোকের স্বভাবতই সন্দেহ হইতে পারে। বিদেশীর চোখে ত্রিপুরার গড়ের কাছে বিজয়গড় কোনো অংশে খাটাে হইয়া যাইবে ইহা খুড়াসাহেবের পক্ষে অসহ্য । তিনি কহিলেন, “ঠাকুর, বোধ করি, আপনার ত্রিপুরা অনেক দূরে এবং আপনি ব্ৰাহ্মণ, দেবসেবাই আপনার একমাত্র কাজ, আপনার দ্বারা কিছুই প্রকাশ হইবার সম্ভাবনা নাই ।” রঘুপতি কহিলেন, “কাজ কী সাহেব, সন্দেহ হয় তো ও-সব কথা থাকি-না। আমি ব্ৰাহ্মণের ছেলে, আমার দুর্গের খবরে কাজ কী ।” খুড়াসাহেব জিভ কাটিয়া কহিলেন, “আরে রাম রাম, আপনাকে আবার সন্দেহ কিসের ! চলুন, একবার দেখাইয়া লইয়া আসি ৷” এ দিকে সহসা দুর্গের বাহিরে সুজার সেনাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা উপস্থিত হইয়াছে। অরণ্যের মধ্যে সুজার শিবির ছিল, সুলেমান এবং জয়সিংহের সৈন্য আসিয়া সহসা তাহাকে বন্দী করিয়াছে এবং অলক্ষ্যে দুৰ্গ-আক্রমণকারীদের উপরে আসিয়া পড়িয়াছে। সুজার সৈন্যেরা লড়াই না করিয়া কুড়িটা কামান পশ্চাতে ফেলিয়া ভঙ্গ দিল । দুর্গের মধ্যে ধুম পড়িয়া গেল। বিক্রমসিংহের নিকট সুলেমানের দূত পৌঁছিতেই তিনি দুর্গের দ্বার খুলিয়া দিলেন, স্বয়ং অগ্রসর হইয়া সুলেমান ও রাজা জয়সিংহকে অভ্যর্থনা করিয়া লইলেন । দিল্লীশ্বরের সৈন্য ও অশ্ব-গজে দুর্গ পরিপূর্ণ হইয়া গেল। নিশান উড়িতে লাগিল, শঙ্খ ও রণবাদ্য বািড় লাগিল এবং সুভাসাহেবের থেত গুফের নীচে থেত হাস্য পরিপূর্ণরূপে প্রস্ফুটিত হইয়া ত্ৰয়োবিংশ পরিচ্ছেদ খুড়াসাহেবের কী আনন্দের দিন ! আজি দিল্লীশ্বরের রাজপুত সৈন্যেরা বিজয়গড়ের অতিথি হইয়াছে। প্রবলপ্রতাপান্বিত শাসুজ। আজ বিজয়গড়ের বন্দী। কর্তবীর্যর্জনের পর হইতে বিজয়গড়ে এমন বন্দী আর মেলে নাই। কর্তবীৰ্যার্জনের বন্ধন-দশা স্মরণ করিয়া নিশ্বাস ফেলিয়া খুড়াসাহেব রাজপুত সুচেতসিংহকে বলিলেন, “মনে করিয়া দেখাে, হাজারটা হাতে শিকলি পরাইতে কী আয়োজনটাই করিতে হইয়াছিল। কলিযুগ পড়িয়া অবধি ধুমধাম বিলকুল কমিয়া গিয়াছে। এখন