পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ8 Հ রবীন্দ্র-রচনাবলী অপরাধী ।” রাজা বিস্মিত হইয়া কহিলেন, “খুড়াসাহেব, ব্যাপার কী !” খুড়াসাহেব কহিলেন, “সেই ব্ৰাহ্মণ ! এ-সমস্ত সেই বাঙালি ব্ৰাহ্মণের কাজ ।” রাজা জয়সিংহ জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কে ?” জয়সিংহ। তুমি কী করিয়াছ ? খুড়াসাহেব । আমি বিজয়গড়ের ভেদ করিয়া বিশ্বাসঘাতকের কাজ করিয়াছি। আমি নিতান্ত নির্বোধের মতো বিশ্বাস করিয়া বাঙালি ব্ৰাহ্মণকে সুরঙ্গ-পথের কথা বলিয়াছিলাম— বিক্রমসিংহ সহসা জ্বলিয়া উঠিয়া বলিলেন, “খড়গসিং !” খুড়াসাহেব চমকিয়া উঠিলেন- তিনি প্ৰায় ভুলিয়া গিয়াছিলেন যে র্তাহার নাম খড়গসিংহ। বিক্রমসিংহ কহিলেন, “খড়গসিং, এতদিন পরে তুমি কি আবার শিশু হইয়াছ!” খুড়াসাহেব নতশিরে চুপ করিয়া রহিলেন । ফর্মসিংহ। শুভাসাহেব, তুমি এই কাজ কৰিলে! তােমার হাতে আজ বিজয়গড়ের আগমন খুড়াসাহেব চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিলেন, তাহার হাত থারথার করিয়া কঁাপিতে লাগিল। কম্পিত হস্তে কপাল স্পর্শ করিয়া মনে মনে কহিলেন, “অদৃষ্ট !” বিক্রমসিংহ কহিলেন, “আমার দুর্গ হইতে দিল্লীশ্বরের শত্ৰু পলায়ন করিল ! জানো, তুমি আমাকে দিল্লীশ্বরের নিকটে অপরাধী করিয়াছ !” খুড়াসাহেব কহিলেন, “আমিই এক অপরাধী । মহারাজ অপরাধী এ কথা দিল্লীশ্বর বিশ্বাস করিবেন की ।” বিক্রমসিংহ বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “তুমি কে ? তোমার খবর দিল্লীশ্বর কী রাখেন ? তুমি তো আমারই লোক । এ যেন আমি নিজের হাতে বন্দীর বন্ধন মোচন করিয়া দিয়াছি।” খুড়াসাহেব নিরুত্তর হইয়া রহিলেন । তিনি চােখের জল আর সামলাইতে পারিলেন না । বিক্রমসিংহ কহিলেন, “তোমাকে কী দণ্ড দিব ?” খুড়াসাহেব । মহারাজের যেমন ইচ্ছা । মিসিংহ। তুমি বুড়ামানুষ , তোমাকে অধিক আর কী দণ্ড দিব । নির্বাসনদণ্ডই তোমার পক্ষে य028 | খুড়াসাহেব বিক্রমসিংহের পা জড়াইয়া ধরিলেন ; কহিলেন, “বিজয়গড় হইতে নির্বাসন ! না। মহারাজ, আমি বৃদ্ধ, আমার মতিভ্ৰম হইয়াছিল। আমাকে বিজয়গড়েই মরিতে দিন। মৃত্যুদণ্ডের মুকুড়ি দিন। এই বুড় বয়সে শেয়াল কুকুরের মতাে আমাকে বিজয়গড় হইতে কােইঃ রাজা জয়সিংহ কহিলেন, “মহারাজ, আমার অনুরোধে ইহার অপরাধ মার্জন করুন। আমি সম্রাটকে সমস্ত অবস্থা অবগত করিব।” খুড়াসাহেবের মার্জনা হইল। সভা হইতে বাহির হইবার সময় খুড়াসাহেব কঁপিয়া পড়িয়া গেলেন । সেদিন হইতে খুড়াসাহেবকে আর বড়ো একটা দেখা যাইত না । তিনি ঘর হইতে বাহির হইতেন না | তাহার মেরুদণ্ড যেন ভাঙিয়া গেল ।