পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* Gł R রবীন্দ্র-রচনাবলী রাজা কহিলেন, “পাচটা আঙুলেই বেশ কাজ চলিয়া যায়, দুর্ভাগ্যক্রমে সাতটা আঙুল পাইলে ইচ্ছা! করিয়া কাজ বাড়াইতে হয় ।” রাজা ধ্রুবকে ডাকিলেন । ধ্রুব তাহার সঙ্গিনীর সহিত পুনরায় শান্তি স্থাপন করিয়া খেলা করিতেছিল। রাজার ডাক শুনিয়া তৎক্ষণাৎ খেলা ছাড়িয়া রাজার কাছে আসিয়া উপস্থিত হইল। রাজা তাহাকে সম্মুখে বসাইয়া কহিলেন, “ধুব, সেই নূতন গানটি ঠাকুরকে শোনাও।” কিন্তু ধ্রুব নিতান্ত আপত্তির ভাবে ঠাকুরের মুখের দিকে চাহিল। রাজা লোভ দেখাইয়া বলিলেন, “তোমাকে টকটক চড়তে দেব ।” ধ্রুব তাহার আধো-আধো উচ্চারণে বলিতে লাগিল এক যে, অনেকগুলি হে । আমায় এক করো তোমার প্রেমে বেঁধে, এক পথ আমায় দেখাও অবিচ্ছেদে, ধাদার মাঝে পড়ে কত মারি কেঁদে চরণেতে লাহাে তুলি হে। ধ্ৰুবের মুখে আধাে-আধো স্বরে এ কবিতা শুনিয়া বিন্ধন ঠাকুর নিতান্ত বিগলিত হইয়া গেলেন । তিনি বলিলেন, “আশীর্বাদ করি তুমি চিরজীবী হইয়া থাকো ।” ধ্রুবকে কোলে তুলিয়া লইয়া ঠাকুর অনেক মিনতি করিয়া বলিলেন, “আর-একবার শুনাও ” সুদৃঢ় মৌন আপত্তি প্রকাশ করিল। পুরোহিত চক্ষু আচ্ছাদন করিয়া কহিলেন, “তবে আমি יין ধ্রুব ঈষৎ বিচলিত হইয়া কহিল, “কাল শোনাব। ছিকঁদতে নেই। তুমি একন বায়ি (বাড়ি) যাও । বাবা মা’বে ।” বিম্বন হাসিয়া কহিলেন, “মধুর গলাধাক্কা ।” রাজার নিকটে বিদায় লইয়া পুরোহিত-ঠাকুর পথে বাহির হইলেন । পথে দুইজন পথিক যাইতেছিল। একজন আর-একজনকে কহিতেছিল, “তিন দিন তার দরজায় মাথা ভেঙে মলুম, এক পয়সা বের করতে পারলুম না— এইবার সে পথে বেরোলে তার মাথা ভাঙবা, দেখি তাতে কী হয় ।” পিছন হইতে বিন্ধন কহিলেন, “তাতেও কোনাে ফল হবে না। দেখতেই তো পােচ্ছ বাপু, মাথার