পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

aWりの রবীন্দ্র-রচনাবলী বলিবেন— যে আজ্ঞে, আমি এখনি যাইতেছি । অধিক বিলম্ব হইবে না। বলিয়া নাগরা জুতাজোড়াটা পায়ে দিয়া দাদার পিছনে পিছনে মাথা নিচু করিয়া টাটু ঘোড়াটির মতো চলিবেন । বাদশাহের মোগল ফৌজ তামাশা দেখিয়া হাসিয়া ঘরে ফিরিয়া যাইবে ।” নক্ষত্ররায় রঘুপতির মুখে এই তীব্র বিদ্যুপ শুনিয়া অত্যন্ত কাতর হইয়া পড়িলেন। কিঞ্চিৎ হাসিবাৰ নিস্ফল চেষ্টা করিয়া বলিলেন, “আমাকে কি ছেলেমানুষ পাইয়াছে যে এমনি করিয়া ভুলাইবে । তাহার জো নাই। সে হবে না ঠাকুর । দেখিয়া লইয়ো ।” সেইদিন গোবিন্দমাণিক্যের চিঠি আসিয়া পৌঁছিল। সে চিঠি রঘুপতি খুলিলেন । রাজা অত্যন্ত স্নেহপ্ৰকাশ করিয়া সাক্ষাৎ প্রার্থনা করিয়াছেন। চিঠি নক্ষত্ররায়কে দেখাইলেন না। দূতকে বলিয়া দিলেন, “কষ্ট স্বীকার করিয়া গোবিন্দমাণিক্যের এতদূর আসিবার দরকার নাই। সৈন্য ও তরবারি লইয়া মহারাজ নক্ষত্রমাণিক্য শীঘ্রই তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিবেন । গোবিন্দমাণিক্য এই অল্প কাল যেন প্রিয়ভ্রাতৃবিরহে অধিক কাতর হইয়া না পড়েন । আট বৎসর নির্বাসনে থাকিলে ইহা অপেক্ষা আরো অধিক কাল বিচ্ছেদের সম্ভাবনা ছিল ।” রঘুপতি নক্ষত্ররায়কে গিয়া কহিলেন, “গােবিন্দমাণিক্য নির্বাসিত ছােটাে ভাইকে অত্যন্ত স্নেহপূর্ণ একখানি চিঠি লিখিয়াছেন ।” নক্ষত্ররায় পরম উপেক্ষার ভান করিয়া হাসিয়া বলিলেন, “সত্য না কি ! কী চিঠি ? কই দেখি ।” বলিয়া হাত বাড়াইয়া দিলেন । রঘুপতি কহিলেন, “সে চিঠি মহারাজকে দেখানো আমি আবশ্যক বিবেচনা করি নাই। তখনই ছিড়িয়া ফেলিয়াছি । বলিয়াছি, যুদ্ধ ছাড়া ইহার আর কোনো উত্তর নাই ।” নক্ষত্ররায় হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “বেশ করিয়াছ ঠাকুর ! তুমি বলিয়াছ যুদ্ধ ছাড়া আর কোনো উত্তর নাই ? বেশ উত্তর দিয়াছ ।” রঘুপতি কহিলেন, “গোবিন্দমাণিক্য উত্তর শুনিয়া ভাবিবে যে, যখন নির্বাসন দিয়াছিলাম তখন তো ভাই বেশ সহজে গিয়াছিল, কিন্তু সেই ভাই ঘরে ফিরিয়া আসিবার সময় তো কম গোলযোগ করিতেছে नीं ।” নক্ষত্ররায় কহিলেন, “মনে করিবেন। ভাইটি বড়ো সহজ লোক নয় । মনে করিলেই যে যখন ইচ্ছা! নির্বাসন দিব এবং যখন ইচ্ছা ডাকিয়া লইব, সেটি হইবার জো নাই ।” বলিয়া অত্যন্ত আনন্দে দ্বিতীয়বার হাসিতে লাগিলেন । পঞ্চত্রিংশ পরিচ্ছেদ নক্ষত্ররায়ের উত্তর শুনিয়া গোবিন্দমাণিক্য অত্যন্ত মর্মাহত হইলেন । বিশ্বন মনে করিলেন, এবারে হয়তো মহারাজা। আপত্তি প্ৰকাশ করিবেন না । কিন্তু গোবি বলিলেন, “এ কথা কখনোই নক্ষত্ররায়ের কথা নহে। এ সেই পুরোহিত বলিয়া পঠাইয়াছে। নক্ষত্রের মুখ দিয়া এমন কথা কখনোই বাহির হইতে পারে না ।” বিন্ধন কহিলেন, “মহারাজ, এক্ষণে কী উপায় স্থির করিলেন ?” রাজা কহিলেন, “আমি নক্ষত্রের সঙ্গে কোনােক্রমে একবার দেখা করিতে পাই, তাহা হইলে সমস্ত মিটমাট করিয়া দিতে পারি ।” বিন্ধন কহিলেন, “আর দেখা যদি না হয় ?” রাজা । তাহা হইলে আমি রাজ্য ছাড়িয়া দিয়া চলিয়া যাইব । বিম্বন কহিলেন, “আচ্ছা, আমি একবার চেষ্টা করিয়া দেখি ।” পাহাড়ের উপর নক্ষত্ররায়ের শিবির। ঘন জঙ্গল। বঁাশবন, বেতবন, খাগড়ার বন । নানাবিধ