পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१७२ রবীন্দ্র-রচনাবলী তিলমাত্র বিলম্ব করিয়া কাজ নাই, যত শীঘ্র এখান হইতে বাহির হইয়া পড়া যায় ততই ভালো।” বিন্ধন কহিলেন, “ঠিক কথা ।” তিনমুড়া পাহাড়ে সন্ন্যাসীর সহিত শিবলিঙ্গের পূজা করিতে যাইতেছেন বলিয়া নক্ষত্ররায় বিন্ধনের সহিত অশ্বারোহণে যাত্রা করিলেন । অনুচরণগণ সঙ্গে যাইতে চাহিল, তাহাদিগকে নিরস্ত করিলেন। সবে বাহির হইয়াছেন মাত্র, এমন সময়ে অশ্বের ক্ষুরধ্বনি ও সৈন্যদের কোলাহল শুনিতে পাইলেন । নক্ষত্ররায় নিতান্ত সংকুচিত হইয়া গেলেন । দেখিতে দেখিতে রঘুপতি সৈন্য লইয়া ফিরিয়া আসিলেন । আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, “মহারাজ, কোথায় যাইতেছেন ?” নক্ষত্ররায় কিছুই উত্তর দিতে পারিলেন না। নক্ষত্ররায়কে নিরুত্তর দেখিয়া বিন্ধন কহিলেন, “মহারাজ গোবিন্দমাণিক্যের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাইতেছেন।” রঘুপতি বিন্ধনের আপাদমস্তক একবার নিরীক্ষণ করিলেন, একবার ভু কুঞ্চিত করিলেন, তার পরে আত্মসম্বরণ করিয়া কহিলেন, “আজ এমন অসময়ে আমরা আমাদের মহারাজকে বিদায় দিতে পারি না। ব্যস্ত হইবার তো কোনাে কারণ নাই । কাল প্ৰাতঃকালে যাত্রা করিলেই তো হইবে। কী বলেন মহারাজ ?” নক্ষত্ররায় মৃদুস্বরে কহিলেন, “কাল সকালেই যাইব, আজ রাত হইয়া গেছে।” বিন্ধন নিরাশ হইয়া সে রাত্রি শিবিরেই যাপন করিলেন । পরদিন প্ৰভাতে নক্ষত্ররায়ের নিকট যাইতে চেষ্টা করিলেন, সৈন্যেরা বাধা দিল । দেখিলেন চতুর্দিকে পাহারা, কোনো দিকে ছিদ্র নাই ; অবশেষে রঘুপতির নিকট গিয়া কহিলেন, “যাত্রার সময় হইয়াছে, যুবরাজকে সংবাদ দিন ।” রঘুপতি কহিলেন, “মহারাজ যাইবেন না স্থির করিয়াছেন।” বিম্বন কহিলেন, “আমি একবার তাহার ”সহিত সাক্ষাৎ করিতে ইচ্ছা করি ।” রঘুপতি । সাক্ষাৎ হইবে না। তিনি বলিয়া দিয়াছেন । বিম্বন কহিলেন, “মহারাজ গোবিন্দমাণিক্যের পত্রের উত্তর চাই ।” রঘুপতি । পত্রের উত্তর ইতিপূর্বে আর-একবার দেওয়া হইয়াছে। বিন্ধন । আমি তাহার নিজমুখে উত্তর শুনিতে চাই । রঘুপতি । তাহার কোনো উপায় নাই । বিন্ধন বুঝিলেন বৃথা চেষ্টা ; কেবল সময় ও বাক্য -ব্যয় । যাইবার সময় রঘুপতিকে বলিয়া গেলেন, “ব্ৰাহ্মণ, এ কী সর্বনাশী-সাধনে তুমি প্ৰবৃত্ত হইয়াছ ! এ তো ব্ৰাহ্মণের কাজ নয় ।” ষটুত্রিংশ পরিচ্ছেদ । বিম্বন ফিরিয়া গিয়া দেখিলেন, ইতিমধ্যে রাজা কুকিদের বিদায় করিয়া দিয়াছেন । তাহারা রাজ্যমধ্যে উপদ্রব আরম্ভ করিয়া দিয়াছিল । সৈন্যদল প্রায় ভাঙিয়া দিয়াছেন । যুদ্ধের উদযোগ বড়ো একটা কিছু নাই । বিন্ধন ফিরিয়া আসিয়া রাজাকে সমস্ত বিবরণ বলিলেন । রাজা কহিলেন, “তবে ঠাকুর, আমি বিদায় হই। নক্ষত্রের জন্য রাজ্য ধন রাখিয়া দিয়া চলিলাম। " বিন্ধন কহিলেন, “অসহায় প্রজাদিগকে পরহস্তে ফেলিয়া দিয়া তুমি পলায়ন করিবে, ইহা স্মরণ করিয়া আমি কোনোমতেই প্ৰসন্ন মনে বিদায় দিতে পারি না মহারাজ ! বিমাতার হস্তে পুত্রকে সমর্পণ করিয়া ভারমুক্ত মাতা শান্তিলাভ করিলেন, ইহা কি কল্পনা করা যায় ?” রাজা কহিলেন, “ঠাকুর, তোমার বাক্য আমার হৃদয়ে বিদ্ধ হইয়া প্রবেশ করে । কিন্তু এবার আমাকে মার্জনা করো, আমাকে আর অধিক কিছু বলিয়াে না। আমাকে বিচলিত করিবার চেষ্টা করিয়ো না । তুমি জান ঠাকুর, আমি মনে মনে প্ৰতিজ্ঞা করিয়াছিলাম রক্তপাত আর করিব না ; সে প্রতিজ্ঞা আমি उछèि6ङ 2दि क्रा ।” বিম্বন কহিলেন, “তবে এখন মহারাজ কী করিবেন ?”