পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজর্ষি ԳԵՏ তোমার সঙ্গী হইয়া তোমার সকল কার্যে আমি যোগ দিব ।” রাজা প্ৰথমে রঘুপতির ভাব কিছু বুঝিতে পারিলেন না। তিনি একবার মনে করিলেন, ঃ , রঘুপতি বুঝি রঘুপতি কহিলেন, “আমি সমস্ত দেখিয়াছি, কিছুতেই সুখ নাই। হিংসা করিয়া সুখ নাই, আধি ਜਜਜ আমি তোমাকে হিংসা করিয়াছি, তােমাকে আমার কাছে বলি দিতে চাহিয়াছিলাম, আজ আমাকে তোমার কাছে সম্পূর্ণ ত্যাগ করিতে আসিয়াছি।” গোবিন্দমাণিক্য কহিলেন, “ঠাকুর, তুমি আমার পরম উপকার করিয়াছ । আমার শত্ৰু আমার ছায়ার মতো আমার সঙ্গে সঙ্গেই লিপ্ত হইয়া ছিল, তাহার হাত হইতে তুমি আমাকে পরিত্রাণ করিয়ােছ।” রঘুপতি সে কথায় বড়ো-একটা কান না দিয়া কহিলেন, “মহারাজ, আমি জগতের রক্তপাত করিয়া যে পিশাচীকে এতকাল সেবা করিয়া আসিয়াছি, সে অবশেষে আমারই হৃদয়ের সমস্ত রক্ত শোষণ করিয়া পান করিয়াছে। সেই শোণিতপিপাসী জড়তা-মৃঢ়তাকে আমি দূর করিয়া আসিয়াছি ; সে এখন মহারাজের রাজ্যের দেবমন্দিরে নাই, এখন সে রাজসভায় প্রবেশ করিয়া সিংহাসনে চড়িয়া বসিয়াছে।” কের কৃছিলেন, “দেবমন্দির ইষ্টতে যদি সে দূর হয় তাে ক্ৰমে মানবের হৃদয় হইতেও দূর হইতে রবো ।” পশ্চাৎ হইতে একটি পরিচিত স্বর কহিল, “না মহারাজ, মানবহৃদয়ই প্রকৃত মন্দির, সেইখানেই খড়গ শাণিত হয় এবং সেইখানেই শতসহস্ৰ নরবলি হয় ! দেবমন্দিরে তাহার সামান্য অভিনয় হয় N. " রাজা সচকিত হইয়া ফিরিয়া দেখিলেন সহাস্য-সীেমামূর্তি বিন্ধন। তঁহাকে প্ৰণাম করিয়া রুদ্ধকণ্ঠে বিন্ধন কহিলেন, “মহারাজ, আপনাকে জয় করিয়াছেন বলিয়া সকলকেই জয় করিয়াছেন । তাই আজ। আপনার দ্বারে শক্ৰমিত্ৰ সকলে একত্র হইয়াছে !” যুক্ত অগ্রসর হইয়া কহিলেন, "মহারাজ, আমিও তোমার শত্ৰু, আমিও তোমার হাতে ধরা יין রঘুপতির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া কহিলেন, “এই ব্ৰাহ্মণ ঠাকুর আমাকে জানেন । আমিই সুজা, বাংলার নবাব, আমিই তোমাকে বিনাপরাধে নির্বাসিত করিয়াছি এবং সে পাপের শাস্তিও পাইয়াছিআমার ভ্রাতার হিংসা আজ পথে পথে আমার অনুসরণ করিতেছে, আমার রাজ্যে আমার আর দাড়াইবার স্থান নাই । ছদ্মবেশে আমি আর থাকিতে পারি না, তোমার কাছে সম্পূৰ্ণ আত্মসমৰ্পণ করিয়া আমি বঁাচিলাম ।” । তখন রাজা ও নবাব উভয়ে কোলাকুলি করিলেন । রাজা কেবলমাত্ৰ কহিলেন, “আমার কী সৌভাগ্য ।” রঘুপতি কহিলেন, “মহারাজ, তোমার সহিত শক্রিতা করিলেও লাভ আছে । তোমার শত্রুতা করিতে গিয়াই তোমার কাছে ধরা পড়িয়াছি, নহিলে কোনোকালে তোমাকে জানিতাম না ।” বিন্ধন হাসিয়া কহিলেন, “যেমন ফাসের মধ্যে পড়িয়া ফাস ছিড়িতে গিয়া গলায় আরো অধিক বঁধিয়া যায় ।” রঘুপতি কহিলেন, “আমার আর দুঃখ নাই— আমি শান্তি পাইয়াছি।” বিশ্বন কহিলেন, “শান্তি সুখ আপনার মধ্যেই আছে, কেবল জানিতে পাই না , ভগবান এ যেন মাটির হাঁড়িতে অমৃত রাখিয়াছেন, অমৃত আছে বলিয়া কাহারও বিশ্বাস হয় না। আঘাত লাগিয়া হাড়ি ভাঙিলে তবে অনেক সময়ে সুধার আস্বাদ পাই। হায় হায়, এমন জিনিসও এমন জায়গায় থাকে। " এমন সময়ে একটা অভ্ৰভেদী হাে হাে শব্দ উঠিল । দেখিতে দেখিতে দুর্গের মধ্যে ছোটাে বড়ো