য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্ৰ しての○ পিয়ানাের শব্দ শুনেছি কি না। এ দেশের অনেক লোক হয়তো পরলোকের একটা ম্যাপ একে দিতে পারে। কিন্তু ভারতবর্ষের সম্বন্ধে যদি একবিন্দুও খবর জানে। ইংলন্ড থেকে কোনো দেশের যে কিছু তফাত আছে তা তারা কল্পনাও করতে পারে না । ভারতবর্ষের কথা দূরে থাক— সাধারণ লোকেরা কত বিষয় জানে না তার ঠিক নেই। তৃতীয় পত্ৰ আমরা সেদিন ফ্যান্সি-বলে অর্থাৎ ছদ্মবেশী নাচে গিয়েছিলেম— কত মেয়ে পুরুষ নানারকম সেজোগুজে সেখানে নাচতে গিয়েছিল । প্ৰকাণ্ড ঘর, গ্যাসের আলোয় আলোকাকীর্ণ, চার দিকে ব্যান্ড বাজছে— ছ-সাত-শো সুন্দরী, সুপুরুষ । ঘরেন স্থানং তিলধারয়েৎ— চাদের হাট তো তাকেই বলে। এক-একটা ঘরে দলে দলে স্ত্রী-পুরুষে হাত ধরাধরি করে ঘুরে ঘুরে নাচ আরম্ভ করেছে, যেন জোড়া জোড়া পাগলের মতো । এক-একটা ঘরে এমন সত্তর আশি জন যুগলমূর্তি ; এমন ঘোষাৰ্ঘেষি যে, কে কার ঘাড়ে পড়ে তার ঠিক নেই। একটা ঘরে শ্যাম্পেনের কুরুক্ষেত্র পড়ে গিয়েছে, মদ্যমাংসের ছড়াছড়ি, সেখানে লোকরণ্য ; এক-একটা মেয়ের নাচের বিরাম নেই, দু-তিন ঘণ্টা ধরে ক্রমাগত তার পা চলছে। একজন মেম তুষার-কুমারী সেজে গিয়েছিলেন, তার সমস্তই শুভ্ৰ, সর্বাঙ্গে পুঁতির সজ্জা, আলোতে ঝকমক করছে। একজন মুসলমানিনী সেজেছিলেন ; একটা লাল ফুলো ইজের, উপরে একটা রেশমের পেশোয়াজ, মাথায় টুপির মতো— এ কাপড়ে তাকে বেশ মানিয়ে গিয়েছিল । একজন সেজেছিলেন আমাদের দিশি মেয়ে, একটা শাড়ি আর একটা কঁচুলি তার প্রধান সজ্জা, তার উপরে একটা চাদর, তাতে ইংরেজি কাপড়ের চেয়ে তাকে ঢের ভালো দেখাচ্ছিল । একজন সেজেছিলেন বিলিতি দাসী । আমি বাংলার জমিদার সেজেছিলেম, জরি দেওয়া মখমলের কাপড়, জরি দেওয়া মখমলের পাগড়ি প্রভৃতি পরেছিলেম । আমাদের মধ্যে ব্যক্তিবিশেষ অযোধ্যার তালুকদার সেজে গিয়েছিলেন, সাদা রেশমের ইজের জরিতে খচিত, সাদা রেশমের চাপকন, সাদা রেশমের জোব্বা, জরিতে ঝকমকায়মান পাগড়ি, জরির কোমরবন্ধ— তার সজ্জা । অযোধ্যার তালুকদারেরা যে এইরকম কাপড় পরে তা হয়তো নয়, কিন্তু ধরা পড়বার কোনো সম্ভাবনা ছিল না । আমাদের মধ্যে এক ব্যক্তি আফগান সেনাপতি সেজেছিলেন । গত মঙ্গলবারে আমরা এক ভদ্রলোকের বাড়িতে নাচের নিমন্ত্রণে গিয়েছিলেম । সন্ধেবেলায় কোথাও নিমন্ত্রণে যেতে হলে শীতের জন্য সচরাচর মোটা কাপড় পরতে হয়, কিন্তু ঈভূনিং পাটি প্রভৃতিতে পাতলা কালো বনাতের কাপড় পরাই রীতি । সান্ধ্য পরিচ্ছদের কামিজটি একেবারে নিষ্কলঙ্ক ধবধবে সাদা হওয়া চাই, তার উপরে প্রায় সমস্ত-বুক খোলা এক বনাতের ওয়েস্টকোট, কালো ওয়েস্টকেটের মধ্যে সাদা কামিজের সুমুখ দিকটা বেরিয়ে থাকে, গলায় সাদা ফিতে (নেকটাই) বাধা, সকলের উপর একটি টেল কোট (লাঙুল-কোট) ; টেল কোটের সুমুখ দিকটা কোমর পর্যন্ত কাটা, আমাদের চাপকন প্রভৃতি পোশাকগুলি যেমন হাঁটু পর্যন্ত পড়ে, এ তা নয়। এর সুমুখ দিকটার সীমা কোমর পর্যন্ত, কিন্তু পিছন দিকটা কাটা নয়, সুতরাং কতকটা লেজের মতো ঝুলতে থাকে । ইংরেজদের অনুকরণে এই লেজকোট পরতে হল। নাচ-পাটিতে যেতে হলে হাতে একজোড়া সাদা দস্তানা পরা চাই, কারণ যে মহিলাদের হাতে হাত দিয়ে নাচতে হবে, খালি হাত লেগে তাদের হাত ময়লা হয়ে যেতে পারে কিংবা তাদের হাতে যদি দস্তানা থাকে সেটা ময়লা হবার ভয় আছে । অন্য কোনো জায়গায় লেডিদের সঙ্গে শেকহ্যান্ড করতে গেলে হাতের দস্তানা খুলে ফেলতে হয়, কিন্তু নাচের ঘরে তার উলটো । যা হােক, আমরা তো সাড়ে নটার সময় তাদের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলেম। তখনাে নাচ আরম্ভ । হয় নি। ঘরের দুয়ারের কাছে গৃহকত্রী দাড়িয়ে আছেন, তিনি বিশেষ পরিচিতদের সঙ্গে শেকহ্যান্ড করছেন, অপরিচিতদের প্রতি শিরঃকম্পন ও সকলকে অভ্যর্থনা করছেন । এ গোরাদের দেশে