পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

しアのbr রবীন্দ্র-রচনাবলী হয়ে যায় যে, তাদের আর হাসবার ক্ষমতা থাকে না। কত লোক হয়তো আমাদের জন্যে গাড়ি চাপা। পড়তে পড়তে বেঁচে গিয়েছে। প্যারিসে আমাদের গাড়ির পিছনে পিছনে এক দল ইস্কুলের ছোকরা চীৎকার করতে করতে ছুটেছিল, আমরা তাদের সেলাম করলেম । এক-একজন আমাদের মুখের উপর (2G 3c), aris-a-Gro (5biCS Qi (35- “Jack, look at the blackies" চতুর্থ পত্ৰ আমরা সেদিন হাউস অফ কমন্সে গিয়েছিলেম। পার্লামেন্টের অভ্ৰভেদী চুড়া, প্ৰকাণ্ড বাড়ি, হঁহা-করা ঘরগুলো দেখলে তাক লেগে যায় । একটা বড়ো ঘরে হাউস বসে, ঘরের চারি দিকে গোল গ্যালারি, তার এক দিকে দর্শকেরা আর-এক দিকে খবরের কাগজের রিপোর্টাররা । গ্যালারি অনেকটা থিয়েটারের ড্রেস-সার্কলের মতো । গ্যালারির নীচে স্টলে মেম্বাররা বসে । তাদের জন্যে দুপাশে হন্দ দশখানি বেঞ্চি । একপাশের পঁাচখানি বেঞ্চিতে গবর্নমেন্টের দল, আর-এক পাশের পাচখানিতে বিপক্ষ দল । সমুখের প্ল্যাটফর্মের উপর একটা কেদারা আছে, সেইখানে প্রেসিডেন্টের মতো একজন (যাকে স্পীকার বলে) মাথায় পরচুলা পরে অত্যন্ত গভীরভাবে বসে থাকেন । যদি কেউ কখনো কোনো অন্যায় ব্যবহার বা কোনো আইনবিরুদ্ধ কাজ করে তা হলে স্পীকার উঠে তাকে বাধা দেয় । যেখানে খবরের কাগজের রিপোর্টাররা সব বসে, তার পিছনে খড়খড়ি দেওয়া একটা গ্যালারিতে মেয়েদের জায়গা, বাইরে থেকে তাদের দেখা যায় না । আমরা যখন গেলেম, তখন ও'ডোনেল বলে একজন আইরিশ সভ্য ভারতবর্ষ সংক্রান্ত বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, প্রেস-অ্যাক্টের বিরুদ্ধে ও অন্যান্য নানা বিষয় নিয়ে তিনি আন্দোলন করছিলেন । তার প্রস্তাব অগ্রাহ্য হয়ে গেল । হাউসের ভাবগতিক দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেম । যখন একজন কেউ বক্তৃতা করছে, তখন হয়তো অনেক মেম্বার মিলে “ইয়া” “ইয়া” “ইয়া” “ইয়া” করে চীৎকার করছে, হাসছে। আমাদের দেশে সভাস্থলে ইস্কুলের ছোকরারও হয়তো এমন করে না। অনেক সময়ে বক্তৃতা হচ্ছে আর মেম্বাররা কপালের উপর টুপি টেনে দিয়ে অকাতরে নিদ্রা যাচ্ছেন । একবার দেখলেম যে, ভারতবর্ষের বিষয় নিয়ে একটা বক্তৃতার সময় ঘরে নয়-দশজনের বেশি মেম্বার ছিল না, অন্যান্য সবাই ঘরের বাইরে হাওয়া খেতে, বা সাপার খেতে গিয়েছেন ; আর যেই ভোট নেবার সময় হল অমনি সবাই চার দিক থেকে এসে উপস্থিত। বক্তৃতা শুনে বা কোনোপ্রকার যুক্তি শুনে যে কারও মত স্থির হয়, তা তো বোধ হল না । গত বৃহস্পতিবারে হাউস অফ কমন্সে ভারতবর্ষ নিয়ে খুব বাদানুবাদ চলেছিল। সেদিন ব্রাইট সিভিল সার্ভিস সম্বন্ধে, গ্ল্যাডস্টোন তুলাজাতের শুষ্ক ও আফগান যুদ্ধ সম্বন্ধে, ভারতবষীয়দের দরখাস্ত দাখিল করেন । চারটের সময় পার্লামেন্ট খোলে । আমরা কয়েকজন বাঙালি চারটে না বাজাতেই হাউসে গিয়ে উপস্থিত হলেম । তখন হাউস খােলে নি, দর্শনার্থীরা হাউসের বাইরে একটা প্ৰকাণ্ড ঘরে দাড়িয়ে আছে। ঘরের চার দিকে বার্ক, ফক্স, চ্যাটাম, ওঅলপোেল প্রভৃতি রাজনীতিবিশারদ মহাপুরুষদের প্রস্তরমূর্তি | প্রতি দরজার কাজে পাহারাওয়ালা পাকা চুলের পরচুলা পরা। গাউন-ঝোলানো পার্লামেন্টের কর্মচারীরা হাতে দুই-একটা খাতপত্র নিয়ে আনাগোনা করছিলেন । চারটের সময় হাউস খুলল। আমাদের কাছে স্পীকার্স গ্যালারির টিকিট ছিল । হাউস অফ কমন্সে পাচ শ্রেণীর গ্যালারি আছে- ষ্ট্রেঞ্জার্স গ্যালারি, স্পীকার্স গ্যালারি, ডিপ্লম্যাটিক গ্যালারি, রিপোর্টাস গ্যালারি, লেডিজ গ্যালারি । হাউসের যে-কোনো মেম্বারের কাছ থেকে বৈদেশিক গ্যালারির টিকিট পাওয়া যায়, আর বক্তার অনুগ্রহ হলে তবে বক্তার গ্যালারির টিকিট পাওয়া যেতে পারে । ডিপ্লম্যাটিক গ্যালারিটা কী পদার্থ তা ভালো করে বলতে পারি নে, আমি যে ক-বার হাউসে গিয়েছি দুই-একজন ছাড়া সেখানে লোক দেখতে পাই নি । ষ্ট্রেঞ্জার্স গ্যালারি থেকে বড়ো ভালো দেখাশুনো যায় না ; তার সামনে স্পীকার্স গ্যালারি ; তার সামনে ডিপ্লম্যাটিক গ্যালারি । আমরা গিয়ে তো বসলেম । পরচুলাধারী স্পীকার মহাশয় গরুড় পক্ষীটির মতো তার সিংহাসনে উঠলেন। হাউসের সভ্যেরা সব