পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

vso রবীন্দ্র-রচনাবলী সপ্তম পত্র এখানকার ধনী ফ্যাশনেবল মেয়েদের কথা একটু বলে নিই। র্তাদের দোরস্ত করতে হলে দিন-দুই আমাদের দিশি শাশুড়ির ও বিধবা ননদের হাতে রাখতে হয়। র্তারা হচ্ছেন বড়োমানুষের মেয়ে কিংবা বড়োমানুষের স্ত্রী । তাদের চাকর আছে, কাজকর্ম করতে হয় না, একজন হাউস-কীপার আছে, সে বাড়ির সমস্ত ঘরকন্না তদারক করে, একজন নার্স আছে, সে ছেলেদের মানুষ করে, একজন গভর্নেস আছেন, তিনি ছেলেপিলেদের পড়াশুনা দেখেন ও অন্যান্য নানাবিধ বিষয়ে তদারক করেন ; তবে আর পরিশ্রম করার কী রইল বলে । কেবল একটা বাকি আছে, সেটা হচ্ছে সাজসজা ; কিন্তু তার জন্য র্তার লেডিজ মেড আছে, সুতরাং সেটাও সমস্তটা নিজের হাতে করতে হয় না। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত দিনটা তার হাতে আস্ত পড়ে থাকে। সকালবেলায় বিছানায় পড়ে দরজা-জানলা বন্ধ করে সূর্যের আলো আসতে না দিয়ে দিনটাকে কতকটা সংক্ষেপ করেন, বিছানায় শুয়ে শুয়ে ব্রেকফাস্ট খান ও এগারোটার আগে শয়নগৃহ থেকে বেরোলে যথেষ্ট ভোরে উঠেছেন মনে করেন। তার পরে সাজসজ্জা ; সে-বিষয়ে তোমাকে কোনোপ্রকার খবর দিতে পারছি নে। শোনা যায় খুব সম্প্রতি বিলেতে স্নানটা ফ্যাশন হয়েছে কিন্তু এখনো এটা খুব কম দূর ব্যাপ্ত। সীমস্তিনীরা হাতের যতটুকু বেরিয়ে থাকে- মুখটি ও গলাটি- দিনের মধ্যে অনেকবার অতি যত্নে ধুয়ে থাকেন ; বাকি অঙ্গ পরিষ্কার করবার তারা তত আবশ্যক দেখেন না ; কেননা মনোহরণের প্রধান সিদ্ধ মুখটিতে কোনোপ্রকার মরচে না পড়লেই হল । মাসে দু-বার একটা স্পঞ্জ-বাথ নিলেই তারা যথেষ্ট মনে । করেন । আমি কোনো ইংরেজ পরিবারের মধ্যে বাস করতে গিয়েছিলেম, আমি স্নান করি শুনে তারা বিপন্ন হয়েছিলেন । কোনোপ্রকার স্নানের সরঞ্জাম ছিল না, সেজন্যে অগভীর একটা গোল জলাধার ধার করে আনতে হয়েছিল। বাড়িতে লোক দেখা করতে এলে তাদের সঙ্গে আলাপচারি করা গৃহিণীর কাজ, অনেক লোক একসঙ্গে এলে তার কর্তব্য হচ্ছে র্তার বাক্য ও হাসির অমৃত সকলকে সমানভাবে বিতরণ করা, বিশেষ কারো সঙ্গে বেশি কথা কওয়া বা বিশেষ কাউকে বেশি যত্ন করাটা উচিত নয় । এ কাজটা অত্যন্ত দুরূহ, বোধ হয় অনেক অভ্যেসে দুরন্ত হয় । আমি লক্ষ্য করে দেখেছি তারা একজনের মুখের দিকে চেয়ে একটা কথা কন, তার পরে শেষ করেই সকলের দিকে চেয়ে একবার হাসেন, কখনো বা তারা একজনের মুখের দিকে চেয়ে একটা কথা আরম্ভ করেন, তার পর বলতে বলতে এক-একবার করে সকলের মুখের দিকে চেয়ে নেন, কখনো বা, তাস খেলবার সময় যেরকম করে চটপট তাস বিতরণ করে, তেমনি তঁরা আগন্তুকদের একে একে করে একটি একটি কথার টুকরো ছড়িয়ে ছড়িয়ে দেন, এমন তাড়াতাড়ি ও এমন দক্ষতার সঙ্গে যে, তাদের হাতে যে অনেক কথার তাস গোছানো রয়েছে তা সহজেই বোঝা যায় । একজনকে বললেন, “Lovely morning, isn't it?” তার পরেই তাড়াতাড়ি আর-একজনের মুখের দিকে চেয়ে বললেন, “কাল রাত্তিরে সংগীতশালায় মাডাম নীলসন গান করেছিলেন, it was exquisite!" যতগুলি মহিলা ভিজিটর বসেছিলেন সকলে এই কথায় এক-একটা বিশেষণ যোগ করতে লাগলেন ; একজন বললেন “charming", একজন <&l(in “superb”, q për 361Qir “something unearthly", Vis-atërr qfë fÇair, তিনি বললেন, “isn't it?" আমার বোধ হয়, এ একরকম সকালবেলা উঠে কথোপকথনের মুগুর ভাজা । যা হােক এইরকম মাঝে মাঝে ভিজিটর আনাগোনা করছে। মুভীজ লাইব্রেরিতে তিনি চাদা দিয়ে থাকেন । সেখান থেকে অনবরত ক্ষণজীবী নভেলগুলো তার ওখানে যাতায়াত করে । সেগুলো অনবরত গলাধঃকরণ করেন । তা ছাড়া আছে ভালোবাসার অভিনয় । মিষ্টি হাসি ও মিষ্টি কথার আদান-প্ৰদান, অলীক ছুতো নিয়ে একটু অলীক অভিমান, হয়তো পুরুষ-পক্ষ থেকে একটু রসিকতা, Vis (a bit Is a 12(RTC as Gilgrit, “Oh you naughty, wicked, provoking man!” তাতে নটি ম্যান-এর পরিপূর্ণ তৃপ্তি । এইরকম ভিজিটর অভ্যর্থনা, ভিজিট প্রত্যপণ, নতুন নভেল পড়া, নতুন ফ্যাশন সৃষ্টি ও নতুন ফ্যাশনের অনুবর্তন করা, এবং তার সঙ্গে মধুর