পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্ৰ ԵrՀՏ) পরস্পরকে মিস্টার ব- ও মিসেস ব- বলে ডাকেন । আমার সঙ্গে মিসেস হয়তো বেশ কথাবার্তা কচ্ছেন, এমন সময় মিস্টার এলেন, আমনি সমস্ত চুপচাপ । দুই পক্ষেই এইরকম। একদিন মিসেস আমাকে পিয়ানো শোনাচ্ছেন, এমন সময় মিস্টার এসে উপস্থিত ; বললেন, “When are you going to stop "f Gil 4GiGirl, “I thought you had gone out "frical qila | \s পরে আমি যখন পিয়ানো শুনতে চাইতেম। মিসেস বলতেন, “that horrid man যখন বাড়িতে না থাকবেন তখন শোনাব”, আমি ভারি অপ্ৰস্তুতে পড়ে যেতুম । দুজনে এইরকম অমিল অথচ সংসার বেশ চলে যাচ্ছে । মিসেস রাধছেন, কাজকর্ম করছেন, মিস্টার রোজগার করে টাকা এনে দিচ্ছেন ; দুজনে কখনো প্রকৃত ঝগড়া হয় না, কেবল কখনো কখনো দুই-একবার দুই-একটা কথা-কাটাকাটি হয়, তা এত মৃদুস্বরে যে পাশের ঘরের লোকের কানে পর্যন্ত পৌছয় না। যা হােক আমি সেখানে দিনকতক থেকে বিব্রত হয়ে সে অশান্তির মধ্যে থেকে চলে এসে বেঁচেছি । অষ্টম পত্ৰ আমরা এখন লন্ডন ত্যাগ করে এসেছি । লন্ডনের জনসমুদ্রে জোয়ারভাটা খেলে তা জান ? বসন্তের আরম্ভ থেকে গরমির কিছুদিন পর্যন্ত লন্ডনের জোয়ার-ঋতু। এই সময়ে লন্ডন উৎসবে পূর্ণ থাকে।— থিয়েটার নাচগান, প্ৰকাশ্য ও পারিবারিক “বল”, আমোদপ্রামোদে ঘেঁষাৰ্ঘেষি ঠেসাঠেসি | ধনী পরশু থিয়েটার, তরগু রাত্তিরে ম্যাডাম প্যাটির গান, দিনের চেয়ে রাত্তিরের ব্যস্ততা বেশি। সুকুমারী মহিলা, র্যাদের তিলমাত্র শ্রম লাঘবের জন্যে শত শত ভক্ত সেবকের দল দিনরাত্ৰি প্ৰাণপণ করছেনচৌকিটা সরিয়ে দেওয়া, প্লেটটা এগিয়ে দেওয়া, দরজাটা খুলে দেওয়া, মাংস কেটে দেওয়া, পাখাটা কুড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি— তারা রাত্তিরের পর রাত্তির ন-টা থেকে ভোর চারটে পর্যন্ত গ্যাসের ও মানুষের নিশ্বাসে গরম ঘরের মধ্যে অবিশ্রান্ত নৃত্যে রাত ; সে আবার আমাদের দেশের অলস নড়েচড়ে বেড়ানো বাইনাচের মতো নয়, অনবরত ঘুরপাক । ললিতা রমণীরা কী করে টিকে থাকেন, আমি তাই ভাবি । এই তো গেল। আমোদপ্রমোদ, তা ছাড়া এই সময়ে পার্লামেন্টের অধিবেশন । ব্যান্ডের একতান স্বর, নাচের পদশব্দ, ডিনার-টেবিলের হাস্যালাপধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে সর্বত্র একটা পোলিটিকাল উত্তেজনা । স্থিতিশীল ও গতিশীল দলভুক্তরা প্রতিরাত্রে পার্লামেন্টের রাজনৈতিক মল্লযুদ্ধের বিবরণ কী আগ্রহের সঙ্গে আলোচনা করতে থাকে। সীজনের সময় লন্ডনে এইরকম আলোড়ন । তার পরে আবার ভাটা পড়তে আরম্ভ হয়, লন্ডনের কৃষ্ণপক্ষ আসে। তখন আমোদ-কোলাহল বন্ধ হয়ে যায়, বাকি থাকে। অল্পস্বল্প লোক, যাদের শক্তি নেই, বা দরকার আছে, বা বাইরে যাবার ইচ্ছে নেই। সেই সময়ে লন্ডন থেকে চলে যাওয়া একটা ফ্যাশন । আমি একটা বইয়ে (“Sketches and Travels in London": Thackeray) পড়েছিলুম, এই সময়টাতে অনেকে যারা নগরে থাকে তারা বাড়ির সম্মুখে দরজা জানলা সব বন্ধ করে বাড়ির পিছন দিকের ঘরে লুকিয়ে-চুরিয়ে বাস করে । দেখাতে চায় তারা লন্ডন ছেড়ে চলে গেছে। সাউথ কেনসিংটন বাগানে যাও ; ফিতে, টুপি, পালক, রেশম, পশম ও গাল-রঙ-করা মুখের সমষ্টি চোেখ ঝলসে প্রজাপতির ঝাকের মতো বাগান আলো করে বেড়াচ্ছে না ; বাগান তেমনি সবুজ আছে, সেখানে তেমনি ফুল ফুটেছে, কিন্তু তার সজীব শ্ৰী নেই। গাড়ি ঘোড়া লোকজনের হিজিবিজি ঘুচে গিয়ে লন্ডনটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। সম্প্রতি লন্ডনের সীজন অতীত, আমরাও লন্ডন ছেড়ে টনব্রিজ ওয়েলস বলে একটা আধা-পাড়া গেয়ে জায়গায় এসেছি। অনেক দিনের পর হালকা বাতাস খেয়েই বঁচা গেল। হাজার হাজার চিমনি থেকে অবিশ্রান্ত পাথুরে কয়লার ধোয়া ও কয়লার গুড়ে উড়ে উড়ে লন্ডনের হাড়ে হাড়ে প্রবেশ করেছে। রাস্তায় বেরিয়ে এসে হাত ধুলে সে হাত-ধোয়া জলে বোধ করি। কালির কাজ করা যায় । নিশ্বাসের সঙ্গে অবিশ্রান্ত কয়লার গুড়ো টেনে মগজটা বোধ হয় অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ হয়ে