পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩৮ : রবীন্দ্র-রচনাবলী মন্ত্রী। অামি এই কথাই বলছি, পদে পদে প্রজাদের মনে অসন্তোষ বাড়িয়ে তুলবেন না। দেখুন, মাধবপুরের প্রজারা খুব প্রবল এবং আপনার বিশেষ বাধ্য নয়। তারা রাজ্যের সীমানার কাছে থাকে, পাছে আপনার প্রতিবেশী শত্রুপক্ষের সঙ্গে যোগ দেয়, এই ভয়ে তাদের গায়ে হাত তোলা যায় না । সেইজন্য মাধবপুর-শাসনের ভার যুবরাজের উপর দেবার কথা আমিই মহারাজকে বলেছিলেম। প্রতাপ । সে তো বলেছিলে । তার ফল কী হল দেখে-না। আজ দু বংসরের খাজনা বাকি । সকল মহল থেকে টাকা এল, আর ওখান থেকে কী আদায় হল ? মন্ত্রী। আজ্ঞে, আশীৰ্বাদ । তেমন সব বজাত প্রজাও যুবরাজের পায়ের গোলাম হয়ে গেছে। টাকার চেয়ে কি তার কম দাম ? সেই যুবরাজের কাছ থেকে আপনি মাধবপুরের ভার কেড়ে নিলেন। সমস্তই উণ্টে গেল। এর চেয়ে তাকে না পাঠানোই ভালো ছিল । সেখানকার প্রজারা তো হন্তে কুকুরের মতো ক্ষেপে রয়েছে—তার পরে যদি এই কথাটা প্রকাশ হয়, তা হলে কী হয় বলা যায় না। রাজকার্যে ছোটোদের অবজ্ঞা করতে নেই মহারাজ ! অসহ্য হলেই ছোটোরা জোট বাধে, জোট বাধলেই ছোটোরা বড়ো হয়ে ওঠে । প্রতাপ । সেই ধনঞ্জয় বৈরাগী তো মাধবপুরে থাকে ? মন্ত্রী । অজ্ঞে ই ৷ প্রতাপ । সেই বেটাই যত নষ্টের গোড়া। ধর্মের ভেক ধরে সেই তো যত প্রজাকে নাচিয়ে তোলে। সেই তো প্রজাদের পরামর্শ দিয়ে খাজনা বন্ধ করিয়েছে। উদয়কে বলেছিলুম যেমন করে হোক তাকে আচ্ছা করে শাসন করে দিতে। কিন্তু উদয়কে জান তো ? এ দিকে তার না আছে তেজ, না আছে পৌরুষ, কিন্তু একগুয়েমির অন্ত নেই। ধনঞ্জয়কে শাসন দূরে থাক তাকে আস্পর্ধা দিয়ে বাড়িয়ে তুলেছে। এবারে তার কষ্টিযুদ্ধ কণ্ঠ চেপে ধরতে হচ্ছে, তার পরে দেখা যাবে তোমার মাধবপুরের প্রজাদের কত বড়ো বুকের পাটা! আর দেখো, লোকজন আজই সব ঠিক করে রাখে— খবরটা পাবামাত্রই রায়গড়ে গিয়ে ৰসতে হবে । সেইখানেই শ্রাদ্ধশান্তি করব— আমি ছাড়া উত্তরাধিকারী আর তো কাউকে দেখি নে । বসন্তরায়ের প্রবেশ । প্রতাপাদিত্য চমকিত হইয়া দণ্ডায়মান বসন্ত । আমাকে কিসের ভয় প্রতাপ ? আমি তোমার পিতৃব্য, তাতেও যদি বিশ্বাস না হয় আমি বুদ্ধ, তোমার কোনো অনিষ্ট করি এমন শক্তি নেই। [ প্রতাপ নীরব