পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী দেখলেম বর্ষা গেল চলে, কালে ফরাশটা নিল গুটিয়ে । ভাদ্রশেষের নিরেট গুমটের উপরে । থেকে থেকে ধাক্কা লাগল সংশয়িত উত্তরে হাওয়ার । সাওতাল ছেলের শেষ করেছে কেয়াফুল বেচা, মাঠের দূরে দূরে ছড়িয়ে পড়েছে গোরুর পাল, শ্রাবণভাত্রের ভূরিভোজের অবসানে তাদের ভাবখানা অতি মন্থর ; কী জানি, মুখ-ডোবানো রসালে ঘাসেই তাদের তৃপ্তি না পিঠে কাচা রৌদ্র লাগানো আলস্তে । হাওয়া-বদলের দায় আমার নয় ; তার জন্যে আছেন স্বয়ং দিকৃপালেরা রেলোয়ে স্টেশনের বাইরে, র্তারাই বিশ্বের ছুটিবিভাগে রসস্থষ্টির কারিগর। অস্ত-আকাশে লাগল তাদের নতুন তুলির টান অপূর্ব আলোকের বর্ণচ্ছটায়। প্রজাপতির দল নামালেন রৌদ্রে ঝলমল ফুলভরা টগরের ডালে, পাতায় পাতায় যেন বহিবাধবনি উঠেছে ওদের হালক। ডানার এলেমেলে। তালের রঙিন নৃত্যে । আমার আঙিনার ধারে ধীরে এতদিন চলেছিল এক-সার জুই-বেলের ফোটা-ঝরার ছন্দ, সংকেত এল, তারা সরে পড়ল নেপথ্যে ; শিউলি এল ব্যতিব্যস্ত হয়ে ; এখনো বিদায় মিলল না মালতীর । কাশের বনে লুটিয়ে পড়েছে শুক্লাসপ্তমীর জ্যোৎস্না— পূজার পার্বণে চাদের নূতন উত্তরী বর্ষাজলে ধোপ-দেওয়া ।