পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ २०१ পুলিস আসিয়া গোপীনাথকে ধরিয়া টানিয়া বাহির করিয়া লইয়া গেল। সমস্ত কলিকাতা শহরের দর্শক দুই চক্ষু ভরিয়া গিরিবালার অভিনয় দেখিতে লাগিল, কেবল গোপীনাথ সেখানে স্থান পাইল না । ; বৈশাখ ১৩০২ ঠাকুরদা প্রথম পরিচ্ছেদ নয়নজোড়ের জমিদারের এককালে বাবু বলিয়া বিশেষ বিখ্যাত ছিলেন। তখনকার কালের বাবুয়ানার আদর্শ বড়ো সহজ ছিল না। এখন যেমন রাজা-রায়বাহাদুর খেতাব অর্জন করিতে অনেক খানা নাচ ঘোড়দৌড় এবং সেলাম-সুপারিশের শ্রাদ্ধ করিতে হয়, তখনো সাধারণের নিকট হইতে বাবু উপাধি লাভ করিতে বিস্তর দুঃসাধ্য তপশ্চরণ করিতে হইত। আমাদের নয়নজোড়ের বাবুরা পাড় ছিড়িয়া ফেলিয়া ঢাকাই কাপড় পরিতেন, কারণ পাড়ের কর্কশতায় তাহদের স্বকোমল বাবুয়ান ব্যথিত হইত। তাহারা লক্ষ টাকা দিয়া বিড়ালশাবকের বিবাহ দিতেন এবং কথিত আছে, একবার কোনো উৎসব উপলক্ষে রাত্রিকে দিন করিবার প্রতিজ্ঞা করিয়া অসংখ্য দীপ জালাইয়া সূর্যকিরণের অনুকরণে র্তাহারা সাচ্চ রুপার জরি উপর হইতে বর্ষণ করিয়াছিলেন। ইহা হইতেই সকলে বুঝিবেন সেকালে বাবুদের বাবুয়ান বংশানুক্রমে স্থায়ী হইতে পারিত না । বহুবর্তিকাবিশিষ্ট প্রদীপের মতো নিজের তৈল নিজে অল্পকালের ধুমধামেই নিঃশেষ করিয়া দিত। আমাদের কৈলাসচন্দ্র রায় চৌধুরী সেই প্রখ্যাতযশ নয়নজোড়ের একটি নির্বাপিত বাবু। ইনি যখন জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন তৈল তখন প্রদীপের তলদেশে আসিয়া ঠেকিয়াছিল ; ইহার পিতার মৃত্যু হইলে পর নয়নজোড়ের বাবুয়ান গোটাকতক অসাধারণ শ্রাদ্ধশাস্তিতে অস্তিম দীপ্তি প্রকাশ করিয়া হঠাৎ নিবিয়া গেল । সমস্ত বিষয়-আশয় ঋণের দায়ে বিক্রয় হইল— যে অল্প অবশিষ্ট রহিল তাহাতে পূর্বপুরুষের খ্যাতি রক্ষা করা অসম্ভব । সেইজন্য নয়নজোড় ত্যাগ করিয়া পুত্রকে সঙ্গে লইয়া কৈলাসবাৰু কলিকাতায়