পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SRN 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী মধ্যাহ্নে পাড়ার অধিকাংশ লোক যখন আপিসে গিয়াছে এবং অবশিষ্ট অংশ দ্বার রুদ্ধ করিয়া নিগ্রামগ্ন, তখন কৈলাসবাবুর বাসার সম্মুখে এক জুড়ি আসিয়া দাড়াইল। - তকমা-পরা চাপরাশি তাহকে খবর দিল, “ছোটোলাট-সাহেব আয়া।” ঠাকুরদ প্রাচীনকাল-প্রচলিত শুভ্র জামাজোড়া এবং পাগড়ি পরিয়া প্রস্তুত হইয়া ছিলেন, তাহার পুরাতন ভৃত্য গণেশটিকেও তাহার নিজের ধুতি চাদর জামা পরাইয়া ঠিকঠাক করিয়া রাখিয়াছিলেন। ছোটোলাটের আগমনসংবাদ শুনিয়াই ইণপাইতে ইণপাইতে কঁাপিতে কঁাপিতে ছুটিয়া দ্বারে গিয়া উপস্থিত হইলেন— এবং সন্নতদেহে বারম্বার সেলাম করিতে করিতে ইংরেজবেশধারী আমার এক প্রিয় বয়স্তকে ঘরে লইয়া গেলেন। সেখানে চৌকির উপরে তাহার একমাত্র বহুমূল্য শালটি পাতিয়া রাখিয়াছিলেন, তাহারই উপর কৃত্রিম ছোটোলাটকে বসাইয়া উর্দু ভাষায় এক অতিবিনীত সুদীর্ঘ রক্তৃতা পাঠ করিলেন, এবং নজরের স্বরূপে স্বর্ণরেকাবিতে র্তাহীদের বহুকষ্টরক্ষিত কুলক্ৰমাগত এক আসরফির মালা ধরিলেন। প্রাচীন ভৃত্য গণেশ গোলাপপাশ এবং আতরদান লইয়া উপস্থিত ছিল । কৈলাসবাৰু বারম্বার আক্ষেপ করিতে লাগিলেন যে, তাহদের নয়নজোড়ের বাড়িতে হুজুরবাহাদুরের পদধূলি পড়িলে তাহাদের যথাসাধ্য যথোচিত আতিথ্যের আয়োজন করিতে পারিতেন— কলিকাতায় তিনি প্রবাসী— এখানে তিনি জলহীন মীনের ন্যায় সর্ববিষয়েই অক্ষম— ইত্যাদি। আমার বন্ধু দীর্ঘ হ্যাট সমেত অত্যন্ত গম্ভীরভাবে মাথা নাড়িতে লাগিলেন। ইংরেজি কায়দা-অনুসারে এরূপ স্থলে মাথায় টুপি না থাকিবার কথা কিন্তু আমার বন্ধু ধরা পড়িবার ভয়ে যথাসম্ভব আচ্ছন্ন থাকিবার চেষ্টায় টুপি খোলেন নাই। কৈলাসবাবু এবং তাহার গর্বান্ধ প্রাচীন ভৃত্যটি ছাড়া আর-সকলেই মুহূর্তের মধ্যে বাঙালির এই ছদ্মবেশ ধরিতে পারিত। | দশ মিনিট কাল ঘাড় নাড়িয়া আমার বন্ধু গাত্ৰোখান করিলেন এবং পূর্বশিক্ষা-মত চাপরাশিগণ সোনার রেকাবিমুদ্ধ আসরফির মালা, চৌকি হইতে সেই শাল, এবং ভূত্যের হাত হইতে গোলাপপাশ এবং আতরদান সংগ্ৰহ করিয়া ছদ্মবেশীর গাড়িতে তুলিয়া দিল— কৈলাসবাবু বুঝিলেন, ইহাই ছোটোলাটের প্রথা। আমি গোপনে এক পাশের ঘরে লুকাইয়া দেখিতেছিলাম এবং রুদ্ধ হাস্তবেগে আমার পঞ্জর বিদীর্ণ হইবার উপক্রম হইতেছিল। অবশেষে কিছুতে আর থাকিতে না পারিয়া ছুটিয়া কিঞ্চিৎ দূরবর্তী এক ঘরের মধ্যে গিয়া প্রবেশ করিলাম— এবং সেখানে হাসির উচ্ছ্বাস উন্মুক্ত করিয়া দিয়া হঠাং