পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ২১৭ প্রতিহিংসা প্রথম পরিচ্ছেদ মুকুন্দবাবুদের ভূতপূর্ব দেওয়ানের পৌত্রী, বর্তমান ম্যানেজারের স্ত্রী ইন্দ্রাণী অশুভক্ষণে বাবুদের বাড়িতে র্তাহাদের দৌহিত্রের বিবাহে বউভাতের নিমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন । তৎপূর্বকার ইতিহাস সংক্ষেপে বলিয়। রাখিলে কথাটা পরিষ্কার হইবে। এক্ষণে মুকুন্দবাবুও ভূতপূর্ব, তাহার দেওয়ান গৌরীকান্তও ভূতপূর্ব ; কালের আহবান অনুসারে উভয়ের কেহই স্বস্থানে সশরীরে বর্তমান নাই । কিন্তু যখন ছিলেন তখন উভয়ের মধ্যে বন্ধন অত্যন্ত দৃঢ় ছিল। পিতৃমাতৃহীন গৌরীকাস্তের যখন কোনো জীবনোপায় ছিল না তখন মুকুন্দলাল কেবলমাত্র মুখ দেখিয়া তাহাকে বিশ্বাস করিয়া তাহার উপরে নিজের ক্ষুদ্র বিষয়সম্পত্তির পর্যবেক্ষণের ভরে দেন। কালে প্রমাণ হইল যে, মুকুন্দলাল ভুল করেন নাই। কীট যেমন করিয়া বল্মীক রচনা করে, স্বৰ্গকামী যেমন করিয়া পুণ্যসঞ্চয় করে, গৌরীকান্ত তেমনি করিয়া অশ্রাস্ত যত্বে তিলে তিলে দিনে দিনে মুকুন্দলালের বিষয় বৃদ্ধি করিতে লাগিলেন। অবশেষে যখন তিনি কৌশলে আশ্চর্য স্থলভ মূল্যে তরফ বাকাগাড়ি ক্রয় করিয়া মুকুন্দলালের সম্পত্তিভূক্ত করিলেন তখন হইতে মুকুন্দবাবুরা গণ্যমান্ত জমিদারশ্রেণীতে প্রতিষ্ঠিত হইলেন। প্রভুর উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ভূত্যেরও উন্নতি হইল ; অল্পে অল্পে তাহার কোঠাবাড়ি, জোতজমা এবং পূজাৰ্চনা বিস্তার লাভ করিল। এবং যিনি এক কালে সামান্য তহশিলদার শ্রেণীর ছিলেন তিনিও সাধারণের নিকট দেওয়ানজি নামে পরিচিত হইলেন । ইহাই ভূতপূর্ব কালের ইতিহাস। বর্তমান কালে মুকুন্দবাবুর একটি পোষ্যপুত্র আছেন, র্তাহার নাম বিনোদবিহারী । এবং গৌরীকাস্তের স্বশিক্ষিত নাতজামাই অম্বিকাচরণ তাহদের ম্যানেজারের কাজ করিয়া থাকেন। দেওয়ানজি তাহার পুত্র রমাকান্তকে বিশ্বাস করিতেন না— সেইজন্য বাধক্যবশত নিজে যখন কাজ ছাড়িয়া দিলেন তখন পুত্রকে লঙ্ঘন করিয়া নাতজামাই অম্বিকাকে আপন কার্যে নিযুক্ত করিয়া দিলেন । কাজকর্ম বেশ চলিতেছে ; পূর্বের আমলে যেমন ছিল এখনো সকলই প্রায় তেমনি আছে, কেবল একটা বিষয়ে একটু প্রভেদ ঘটিয়াছে ; এখন প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক কেবল २०||>¢