পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२२ রবীন্দ্র-রচনাবলী ‘আমাদেরই দত্ত ধনমানের গর্বে তোমরা আমাদিগকে আজ অপমান করিবার অধিকার পাইয়াছ ইহাই মনে করিয়া ইন্দ্রাণীর চিত্ত ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিল। বাড়ি ফিরিয়া আসিয়া সে দেখিল তাহার স্বামী প্রভৃগুহের নিমন্ত্রণ ও তাহার পরে জমিদারি কাছারির সমস্ত কাজকর্ম সারিয়া তাহার শয়নকক্ষের একটি কেদারা আশ্রয় করিয়া নিভৃতে খবরের কাগজ পাঠ করিতেছেন । অনেকের ধারণা আছে যে, স্বামী-স্ত্রীর স্বভাব প্রায়ই একরূপ হইয়া থাকে। তাহার কারণ, দৈবাৎ কোনো কোনো স্থলে স্বামী-স্ত্রীর স্বভাবের মিল দেখিতে পাইলে সেটা আমাদের নিকট এমন সমুচিত এবং সংগত বলিয়া বোধ হয় যে, আমরা আশা করি এই নিয়ম বুঝি অধিকাংশ স্থলেই খাটে। যাহা হউক, বর্তমান ক্ষেত্রে অম্বিকাচরণের সহিত ইন্দ্রাণীর দুই-একটা বিশেষ বিষয়ে বাস্তবিক স্বভাবের মিল দেখা যায়। অম্বিকাচরণ তেমন মিশুক লোক নহেন। তিনি বাহিরে যান কেবলমাত্র কাজ করিতে। নিজের কাজ সম্পূর্ণ শেষ করিয়া এবং অন্যকে পুরামাত্রায় কাজ করাইয়া লইয়া বাড়ি আসিয়া যেন তিনি অনাত্মীয়তার আক্রমণ হইতে আত্মরক্ষা করিবার জন্য এক দুর্গম দুর্গের মধ্যে প্রবেশ করেন। বাহিরে তিনি এবং তাহার কর্তব্য কর্ম, ঘরের মধ্যে তিনি এবং র্তাহার ইন্দ্রাণী, ইহাতেই তাহার সমস্ত জীবন পর্যাপ্ত । ভূষণের ছটা বিস্তার করিয়া যখন মুসজ্জিত ইন্দ্রাণী ঘরে প্রবেশ করিলেন তখন অম্বিকাচরণ র্তাহাকে পরিহাস করিয়া কী একটা কথা বলিবার উপক্রম করিলেন, কিন্তু সহসা ক্ষাস্ত হইয়া চিন্তিতভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার কী হয়েছে।” ইন্দ্রাণী তাহার সমস্ত চিন্তা হাসিয়া উড়াইয়া দিবার চেষ্টা করিয়া কহিলেন, "কী আর হবে । সম্প্রতি আমার স্বামিরত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে।” অম্বিক খবরের কাগজ ভূমিতলে ফেলিয়া দিয়া কহিলেন, “সে তো আমার অগোচর নেই। তৎপূর্বে ?” ইন্দ্রাণী একে একে গহনা খুলিতে খুলিতে বলিলেন, “তৎপূর্বে স্বামিনীর কাছ থেকে সমাদর লাভ হয়েছে।” অম্বিক জিজ্ঞাসা করিলেন, “সমাদরটা কী রকমের ” ইন্দ্রাণী স্বামীর কাছে আসিয়া তাহার কেদারার হাতার উপর বসিয়া তাহার গ্রীব বেষ্টন করিয়া উত্তর করিল, “তোমার কাছ থেকে যে রকমের পাই ঠিক সেই রকমের নয় ।” তাহার পর, ইন্দ্রাণী একে একে সকল কথা বলিয়া গেল। সে মনে করিয়াছিল স্বামীর কাছে এ-সকল অপ্রিয় কথার উত্থাপন করিবে না ; কিন্তু সে প্রতিজ্ঞা রক্ষণ হইল