পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RHO রবীন্দ্র-রচনাবলী ইন্দ্রাণী তাহাকে মাথার দিব্য দিয়া বলিল, “ইহাতে আর তুমি হাত দিতে পরিবে না ।” অম্বিকাচরণ বড়ো ইতস্ততের মধ্যে পড়িয়া ভাবিতে বসিয়া গেলেন। তিনি ইন্দ্রাণীকে আস্তে আস্তে বুঝাইবার যতই চেষ্টা করিতে লাগিলেন ইন্দ্রাণী কিছুতেই তাহাকে কথা কহিতে দিল না। অবশেষে অম্বিক কিছু বিমর্ষ হইয়া, গম্ভীর হইয়া, নিঃশব্দে বসিয়া রহিলেন । তখন ইন্দ্রাণী লোহার সিন্দুক খুলিয়া তাহার সমস্ত গহনা একটি বৃহং থালায় স্তুপাকার করিল এবং সেই গুরুভার থালাটি বহুকষ্টে দুই হস্তে তুলিয়া ঈষৎ হাসিয়া তাহার স্বামীর পায়ের কাছে রাখিল । পিতামহের একমাত্র স্নেহের ধন ইন্দ্রাণী পিতামহের নিকট হইতে জন্মাবধি বংসরে বৎসরে অনেক বহুমূল্য অলংকার উপহার পাইয়া আসিয়াছে ; মিতাচারী স্বামীরও জীবনের অধিকাংশ সঞ্চয় এই সস্তানহীন রমণীর ভাণ্ডারে অলংকাররূপে রূপান্তরিত হইয়াছে। সেই সমস্ত স্বর্ণমাণিক্য স্বামীর নিকট উপস্থিত করিয়া ইন্দ্রাণী কহিল, “আমার এই গহনাগুলি দিয়া আমার পিতামহের দত্ত দান উদ্ধার করিয়া আমি পুনর্বার র্তাহার প্রভুবংশকে দান করিব।” এই বলিয়া সে সজল চক্ষু মুদ্রিত করিয়া মস্তক নত করিয়া কল্পনা করিল, তাহার সেই বিরল শুভ্রকেশধারী, সরল মুন্দরমুখচ্ছবি, শাস্তস্নেহহাস্যময়, ধীপ্রদীপ্ত উজ্জলগোরকাস্তি বৃদ্ধ পিতামহ এই মুহূর্তে এখানে উপস্থিত আছেন এবং তাহার নত মস্তকে শীতল স্নেহহস্ত রাখিয়া তাহাকে নীরবে আশীৰ্বাদ করিতেছেন । বাকাগাড়ি পরগনা পুনশ্চ ক্রয় হইয়া গেলে, তখন প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিয়া গতভূষণ ইন্দ্রাণী আবার নয়নতারার অন্তঃপুরে নিমন্ত্রণে গমন করিল। আর তাহার মনে কোনো অপমান-বেদন রহিল না । আষাঢ় ১৩০২