পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

救 २8० রবীন্দ্র-রচনাবলী হইতে কাদিয়া কাদিয়া বলিতেছে, “তুমি আমাকে উদ্ধার করিয়া লইয়া যাও— কঠিন মায়া, গভীর নিদ্রা, নিফল স্বপ্নের সমস্ত দ্বার ভাঙিয়া ফেলিয়া, তুমি আমাকে ঘোড়ায় তুলিয়া, তোমার বুকের কাছে চাপিয়া ধরিয়া, বনের ভিতর দিয়া, পাহাড়ের উপর দিয়া, নদী পার হইয়া তোমাদের স্বর্যালোকিত ঘরের মধ্যে আমাকে লইয়া যাও । আমাকে উদ্ধার করো ? আমি কে ! আমি কেমন করিয়া উদ্ধার করিব। আমি এই ঘূর্ণ্যমান পরিবর্তমান স্বপ্নপ্রবাহের মধ্য হইতে কোন মজমান কামনামুন্দরীকে তীরে টানিয়া তুলিব । তুমি কবে ছিলে, কোথায় ছিলে হে দিব্যরূপিণী। তুমি কোন শীতল উৎসের তীরে খর্জুরকুঞ্জের ছায়ায় কোন গৃহহীন মরুবাসিনীর কোলে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলে। তোমাকে কোন বেদুয়ান দস্থ্য বনলতা হইতে পুষ্পকোরকের মতো মাতৃক্রোড় হইতে ছিন্ন করিয়া, বিদ্যুৎগামী অশ্বের উপরে চড়াইয়া, জলন্ত বালুকারাশি পার হইয়া, কোন রাজপুরীর দাসীহাটে বিক্রয়ের জন্য লইয়া গিয়াছিল। সেখানে কোন বাদশাহের ভূত্য তোমার নববিকশিত সলজ্জকাতর যৌবনশোভা নিরীক্ষণ করিয়া স্বর্ণমুদ্র গনিয়া দিয়া, সমুদ্র পার হইয়া, তোমাকে সোনার শিবিকায় বসাইয়া, প্রভূগৃহের অন্তঃপুরে উপহার দিয়াছিল। সেখানে সে কী ইতিহাস। সেই সারঙ্গীর সংগীত, নূপুরের নিকণ এবং সিরাজের সুবর্ণমদিরার মধ্যে মধ্যে ছুরির ঝলক, বিষের জালা, কটাক্ষের আঘাত। কী অসীম ঐশ্বর্য, কী অনন্ত কারাগার। দুই দিকে দুই দাসী বলয়ের হীরকে বিজুলি খেলাইয়৷ চামর দুলাইতেছে। শাহেনশা বাদশ শুভ্র চরণের তলে মণিমুক্তাখচিত পাদুকার কাছে লুটাইতেছে ; বাহিরের দ্বারের কাছে যমদূতের মতো হাবশি দেবদূতের মতে সাজ করিয়া, খোলা তলোয়ার হাতে দাড়াইয়া । তাহার পরে সেই রক্তকলুষিত ঈর্ষাফেনিল ষড়যন্ত্রসংকুল ভীষণেজ্জল ঐশ্বর্যপ্রবাহে ভাসমান হইয়া, তুমি মরুভূমির পুষ্পমঞ্জরী কোন নিষ্ঠুর মৃত্যুর মধ্যে অবতীর্ণ অথবা কোন নিষ্ঠুরতর মহিমাতটে উৎক্ষিপ্ত হইয়াছিলে ? এমন সময় হঠাৎ সেই পাগলা মেহের আলি চীৎকার করিয়া উঠিল, “তফাত যাও, তফাৎ যাও। সব ঝুট হ্যায়, সব ঝুট হ্যায়।” চাহিয়া দেখিলাম, সকাল হইয়াছে ; চাপরাশি ডাকের চিঠিপত্র লইয়া আমার হাতে দিল এবং পাচক আসিয়া সেলাম করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, আজ কিরূপ খান প্রস্তুত করিতে হইবে । আমি কহিলাম, না, আর এ বাড়িতে থাকা হয় না । সেইদিনই আমার জিনিসপত্র তুলিয়া আপিল-ঘরে গিয়া উঠিলাম। আপিলের বৃদ্ধ কেরানি করিম খা আমাকে দেখিয়া