পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ २8७ অামি জিজ্ঞাসা করিলাম, “আমার উদ্ধারের কি কোনো পথ নাই ।” বৃদ্ধ কহিল, “একটিমাত্র উপায় আছে তাহ অত্যন্ত দুরূহ। তাহা তোমাকে বলিতেছি— কিন্তু তৎপূর্বে ওই গুলবাগের একটি ইরানী ক্রীতদাসীর পুরাতন ইতিহাস বলা আবশ্যক । তেমন আশ্চর্ষ এবং তেমন হৃদয়বিদারক ঘটনা সংসারে আর কখনো ঘটে নাই ।” এমন সময় কুলির আসিয়া খবর দিল, গাড়ি আসিতেছে। এত শীঘ্র ? তাড়াতাড়ি বিছানাপত্র বঁাধিতে বাধিতে গাড়ি আসিয়া পড়িল । সে গাড়ির ফাস্ট ক্লাসে একজন স্বপ্তোখিত ইংরাজ জানলা হইতে মুখ বাড়াইয়া স্টেশনের নাম পড়িবার চেষ্টা করিতেছিল, আমাদের সহযাত্রী বন্ধুটিকে দেখিয়াই ‘হ্যালো বলিয়। চীৎকার করিয়া উঠিল এবং নিজের গাড়িতে তুলিয়া লইল। আমরা সেকেণ্ড ক্লাসে উঠিলাম। বাবুট কে খবর পাইলাম না, গল্পেরও শেষ শোনা হইল না । আমি বলিলাম লোকটা আমাদিগকে বোকার মতো দেখিয়া কৌতুক করিয়া ঠকাইয়া গেল ; গল্পটা আগাগোড়া বানানো । এই তর্কের উপলক্ষে আমার থিয়সফিস্ট আত্মীয়টির সহিত আমার জন্মের মতো বিচ্ছেদ ঘটিয়া গেছে। শ্রাবণ ১৩০২ অতিথি প্রথম পরিচ্ছেদ কাঠালিয়ার জমিদার মতিলালবাবু নৌকা করিয়া সপরিবারে স্বদেশে যাইতেছিলেন। পথের মধ্যে মধ্যাহ্নে নদীতীরের এক গঞ্জের নিকট নৌকা বাধিয়া পাকের আয়োজন করিতেছেন এমন সময় এক ব্রাহ্মণবালক আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “বাবু, তোমরা যাচ্ছ কোথায় ?” প্রশ্নকর্তার বয়স পনেরো-ষোলোর অধিক হইবে না। মতিবাবু উত্তর করিলেন, “কাঠালে।” ব্রাহ্মণবালক কহিল, “আমাকে পথের মধ্যে নন্দীগায়ে নাবিয়ে দিতে পার ?”