পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२88 রবীন্দ্র-রচনাবলী বাবু সম্মতি প্রকাশ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার নাম কী।” ব্রাহ্মণবালক কহিল, “আমার নাম তারাপদ ।” গৌরবর্ণ ছেলেটিকে বড়ো স্বনার দেখিতে। বড়ে বড়ো চক্ষু এবং হাস্যময় ওষ্ঠাধরে একটি স্থললিত সোঁকুমাৰ্য প্রকাশ পাইতেছে। পরিধানে একখানি মলিন ধুতি। অনাবৃত দেহখানি সর্বপ্রকার বাহুল্যবর্জিত ; কোনো শিল্পী যেন বহু যত্বে নিখুঁত নিটোল করিয়া গড়িয়া দিয়াছেন। যেন সে পূর্বজন্মে তাপসবালক ছিল এবং নির্মল তপস্তার প্রভাবে তাহার শরীর হইতে শরীরাংশ বহুলপরিমাণে ক্ষয় হইয়া একটি সম্মার্জিত ব্রাহ্মণ্যত্র পরিস্ফুট হইয়া উঠিয়াছে। 皇 মতিলালবাবু তাহাকে পরম স্নেহভরে কছিলেন, “বাবা, তুমি স্নান করে এসো, এইখানেই আহারাদি হবে।” তারাপদ বলিল, “রোমুন ? বলিয়া তৎক্ষণাৎ অসংকোচে রন্ধনের আয়োজনে যোগদান করিল। মতিলালবাবুর চাকরটা ছিল হিন্দুস্থানী, মাছ কোটা প্রভৃতি কার্ষে তাহার তেমন পটুতা ছিল না ; তারাপদ তাহার কাজ নিজে লইয়া অল্পকালের মধ্যেই স্বসম্পন্ন করিল এবং দুই-একটা তরকারিও অভ্যস্ত নৈপুণ্যের সহিত রন্ধন করিয়া দিল । পাককার্য শেষ হইলে তারাপদ নদীতে স্বান করিয়া বোচক খুলিয়া একটি শুভ্র বস্ত্র পরিল ; একটি ছোটো কাঠের কাকই লইয়া মাথার বড়ে বড়ো চুল কপাল হইতে তুলিয়া গ্রীবার উপর ফেলিল এবং মার্জিত পইতার গোচ্ছ বক্ষে বিলম্বিত করিয়া নৌকায় মতিবাবুর নিকট গিয়া উপস্থিত হইল। মতিবাবু তাহাকে নৌকার ভিতরে লইয়া গেলেন। সেখানে মতিবাবুর স্ত্রী এবং র্তাহার নবমবৰ্ষীয় এক কন্যা বসিয়া ছিলেন। মতিবাবুর স্ত্রী অন্নপূর্ণ এই সুন্দর বালকটিকে দেখিয়া স্নেহে উচ্ছসিত হইয়া উঠিলেন– মনে মনে কহিলেন, আহা, কাহার বাছা, কোথা হইতে আসিয়াছে— ইহার মা ইহাকে ছাড়িয়া কেমন করিয়া প্রাণ ধরিয়া অাছে। যথাসময়ে মতিবাবু এবং এই ছেলেটির জন্য পাশাপাশি দুইখানি আপন পড়িল । ছেলেটি তেমন ভোজনপটু নহে ; অন্নপূর্ণ তাহার স্বল্প আহার দেখিয়া মনে করিলেন, সে লজ্জা করিতেছে ; তাহাকে এট। ওটা খাইতে বিস্তর অনুরোধ করিলেন ; কিন্তু যখন সে আহার হইতে নিরস্ত হইল তখন সে কোনো অনুরোধ মানিল না । দেখা গেল, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছা-অনুসারে কাজ করে, অথচ এমন সহজে করে যে তাহাতে কোনোপ্রকার জেদ বা গো প্রকাশ পায় না। তাহার ব্যবহারে লজ্জার লক্ষণও লেশমাত্র দেখা গেল না ।