পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ $8& সকলের আহারাদির পরে অন্নপূর্ণ তাহাকে কাছে বসাইরা প্রশ্ন করিয়া তাহার ইতিহাস জানিতে প্রবৃত্ত হইলেন । বিস্তারিত বিবরণ কিছুই সংগ্ৰহ হইল না। মোট কথা এইটুকু জানা গেল, ছেলেটি সাত-আট বৎসর বয়সেই স্বেচ্ছাক্রমে ঘর ছাড়িয়া পলাইয়া আসিয়াছে। متمم অন্নপূর্ণ প্রশ্ন করিলেন, “তোমার মা নাই ?” তারাপদ কহিল, “আছেন।” অন্নপূর্ণ জিজ্ঞাসা করিলেন, “তিনি তোমাকে ভালোবাসেন না ?” তারাপদ এই প্রশ্ন অত্যন্ত অদ্ভূত জ্ঞান করিয়া হাসিয়া উঠিয়া কহিল, "কেন ভালোবাসবেন না ?” অন্নপূর্ণ প্রশ্ন করিলেন, “তবে তুমি তাকে ছেড়ে এলে যে ” তারাপদ কহিল, “ৰ্তার আরো চারটি ছেলে এবং তিনটি মেয়ে আছে।” অন্নপূর্ণ বালকের এই অদ্ভূত উত্তরে ব্যথিত হইয়া কহিলেন, "ওমা, সে কী কথা! পাচটি আঙুল আছে বলে কি একটি আঙুল ত্যাগ করা যায়।” তারাপদর বয়স অল্প, তাহার ইতিহাসও সেই পরিমাণে সংক্ষিপ্ত, কিন্তু ছেলেটি সম্পূর্ণ নূতনতর। সে তাহার পিতামাতার চতুর্থ পুত্র, শৈশবেই পিতৃহীন হয়। বহু সন্তানের ঘরেও তারাপদ সকলের অত্যন্ত আদরের ছিল ; মা ভাই বোন এবং পাড়ার সকলেরই নিকট হইতে সে অজস্র স্নেহ লাভ করিত । এমন-কি, গুরুমহাশয়ও তাহাকে মারিত না ; মারিলেও বালকের আত্মীয়পর সকলেই তাহাতে বেদনা বোধ করিত। এমন অবস্থায় তাহার গৃহত্যাগ করিবার কোনোই কারণ ছিল না। যে উপেক্ষিত রোগ ছেলেট সর্বদাই চুরি-করা গাছের ফল এবং গৃহস্থ লোকদের নিকট তাহার চতুর্গুণ প্রতিফল খাইয়া বেড়ায় সেও তাহার পরিচিত গ্রামসীমার মধ্যে তাহার নির্যাতনকারিণী মার নিকট পড়িয়া রহিল, আর সমস্ত গ্রামের এই আদরের ছেলে একটা বিদেশী যাত্রার দলের সহিত মিলিয়া অকাতরচিত্তে গ্রাম ছাড়িয়া পলায়ন করিল। সকলে খোজ করিয়া তাহাকে গ্রামে ফিরাইয়া আনিল। তাহার মা তাহাকে বক্ষে চাপিয়া ধরিয়া অশ্রুজলে আর্দ্র করিয়া দিল, তাহার বোনরা কাদিতে লাগিল ; তাহার বড়ো ভাই পুরুষ-অভিভাবকের কঠিন কর্তব্য পালন উপলক্ষে তাহাকে মুকু রকম শাসন করিবার চেষ্টা করিয়া অবশেষে অমৃতপ্তচিত্তে বিস্তর প্রশ্রয় এবং পুরস্কার দিল। পাড়ার মেয়েরা তাহাকে ঘরে ঘরে ডাকিয়া প্রচুরতর আদর এবং বহুতর প্রলোভনে বাধ্য করিতে চেষ্টা করিল। কিন্তু বন্ধন, এমন-কি, মেহবন্ধনও তাহার