পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ২৬৩ তাহার গাছে চড়িতে ইচ্ছাই হইল না। পানাপুকুরটা দেখিয়া তাহার মনে হইল, ইহাতে বাপ দিলেই আমার কাপুনি দিয়া জর আসিবে। চুপচাপ করিয়া দাওয়ায় একটা মাদুর পাতিয়া বসিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিল । একবার মনে হইল, খেলাধুলোগুলো একেবারেই ছাড়িয়া দেওয়াটা ভালো হয় না, একবার চেষ্টা করিয়াই দেখা যাক। এই ভাবিয়া কাছে একটা আমড়া গাছ ছিল, সেইটাতে উঠিবার জন্য অনেকরকম চেষ্টা করিল। কাল যে গাছটাতে কাঠবিড়ালির মতো তর তর করিয়া চড়িতে পারিত আজ বুড়া শরীর লইয়া সে গাছে কিছুতেই উঠিতে পারিল না ; নিচেকার একটা কচি ডাল ধরিবামাত্র সেটা তাহার শরীরের ভারে ভাঙিয়া গেল এবং বুড়া সুশীল ধপ করিয়া মাটিতে পড়িয়া গেল। কাছে রাস্ত দিয়া লোক চলিতেছিল, তাহারা বুড়ীকে ছেলেমানুষের মতো গাছে চড়িতে ও পড়িতে দেখিয়া হাসিয়া অস্থির হইয়া গেল। স্বশীলচন্দ্র লজ্জায় মুখ নিচু করিয়া আবার সেই দাওয়ায় মাছুরে আসিয়া বসিল ; চাকরকে বলিল, "ওরে, বাজার থেকে এক টাকার লজঞ্চুস কিনে আন ।” লজম্বুসের প্রতি স্বশীলচন্দ্রের বড়ো লোভ ছিল। স্কুলের ধারে দোকানে সে রোজ নানা রঙের লজঞ্চুস সাজানো দেখিত ; দু-চার পয়সা যাহা পাইত তাহাতেই লজঞ্জস কিনিয়া খাইত ; মনে করিত যখন বাবার মতো টাকা হইবে তখন কেবল পকেট ভরিয়া ভরিয়া লজঞ্চুস কিনিবে এবং খাইবে । আজ চাকর এক টাকায় একরাশ লজঞ্জুস কিনিয়া আনিয়া দিল ; তাহারই একটা লইয়া সে দন্তহীন মুখের মধ্যে পুরিয়া চুষিতে লাগিল ; কিন্তু বুড়ার মুখে ছেলেমানুষের লজঞ্জুল কিছুতেই ভালো লাগিল না। একবার ভাবিল এগুলো আমার ছেলেমানুষ বাবাকে খাইতে দেওয়া যাকৃ’ ; আবার তখনই মনে হইল, ‘না কাজ নাই, এত লঙ্গপ্পুস খাইলে উহার আবার অস্থখ করিবে।’ কাল পর্যন্ত যে-সকল ছেলে সুশীলচন্দ্রের সঙ্গে কপাট থেলিয়াছে আজ তাহার সুশীলের সন্ধানে আসিয়া বুড়ো স্বশীলকে দেখিয়া দূরে ছুটিয়া গেল। স্বশীল ভাবিয়াছিল, বাপের মতো স্বাধীন হইলে তাহার সমস্ত ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে সমস্তদিন ধরিয়া কেবলই ডুডু ডুডু শব্দে কপাটি থেলিয়া বেড়াইবে ; কিন্তু আজ রাখাল গোপাল অক্ষয় নিবারণ হরিশ এবং নন্দকে দেখিয়া মনে মনে বিরক্ত হইয়া উঠিল ; ভাবিল, চুপচাপ করিয়া বসিয়া আছি, এখনই বুঝিছোড়াগুলোগোলমাল বাধাইয়া দিবে।’ আগেই বলিয়াছি, বাবা মুবলচন্দ্র প্রতিদিন দাওয়ায় মাদুর পাতিয়া বসিয়া বসিয়া ভাবিতেন, যখন ছোটো ছিলাম তখন দুষ্টামি করিয়া সময় নষ্ট করিয়াছি, ছেলেবয়স ফিরিয়া পাইলে সমস্তদিন শাস্ত শিষ্ট হইয়া, ঘরে দরজা বন্ধ করিয়া বসিয়া, কেবল বই