পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

О) o e রবীন্দ্র-রচনাবলী জিনিসটাকে উদরস্থ করি য়ে সম্বন্ধে শিক্ষাকে তার চেয়ে কম দাম দেওয়াই মূখতা। আমাদের প্রতিদিনের খাওয়া সম্বন্ধে আমাদের সমস্ত দেশের কাছে দায়িত্ব আছে এবং সে দায়িত্ব অতি গুরুতর— সম্পূর্ণ উপলব্ধির সঙ্গে এটাকে মনে রাখা পাসের মার্কার চেয়ে অনেক বড়ো । আমি এদের জিজ্ঞাসা করলুম, “কেউ কোনো অপরাধ করলে এখানে তার বিধান कौ ।” একটি মেয়ে বললে, “আমাদের কোনো শাসন নেই, কেননা আমরা নিজেদের শাস্তি দিই।” আমি বললুম, “আর-একটু বিস্তারিত করে বলে। কেউ অপরাধ করলে তার বিচার করবার জন্যে তোমরা কি বিশেষ সভা ডাকে। নিজেদের মধ্যে থেকে কাউকে কি তোমরা বিচারক নির্বাচন করো। শাস্তি দেবার বিধিই বা কী রকমের ।” একটি মেয়ে বললে, “বিচারসভা যাকে বলে তা নয়, আমরা বলা-কওয়া করি । কাউকে অপরাধী করাই শাস্তি, তার চেয়ে শাস্তি আর নেই।” একটি ছেলে বললে, “লেও দুঃখিত হয় আমরাও দুঃখিত হই, বাস চুকে যায়।” । আমি বললুম, “মনে করে কোনো ছেলে যদি ভাবে তার প্রতি অযথা দোষারোপ হচ্ছে তা হলে তোমাদের উপরেও আর-কারে কাছে কি সে ছেলের আপিল চলে।” ছেলেটি বললে, “তখন আমরা ভোট নিই— অধিকাংশের মতে যদি স্থির হয় যে সে অপরাধ করেছে তা হলে তার উপরে আর কথা চলে না।” আমি বললুম, “কথা না চলতে পারে, কিন্তু তবু ছেলেটি যদি মনে করে অধিকাংশই তার উপরে অন্যায় করছে তা হলে তার কোনো প্রতিবিধান আছে কি।” একটি মেয়ে উঠে বললে, “তা হলে হয়তো আমরা শিক্ষকদের পরামর্শ নিতে যাই— কিন্তু এরকম ঘটনা কখনো ঘটে নি।” আমি বললুম, “যে-একটি সাধনার মধ্যে সকলে আছ সেইটেতেই আপনা হতেই অপরাধ থেকে তোমাদের রক্ষা করে।” i ওদের কর্তব্য কী প্রশ্ন করাতে বললে, “অন্য দেশের লোকেরা নিজের কাজের জন্য অর্থ চায়, সম্মান চায়, আমরা তার কিছুই চাই নে, আমরা সাধারণের হিত চাই। আমরা গায়ের লোকদের শিক্ষণ দেবার জন্যে পাড়াগায়ে যাই— কী করে পরিষ্কার হয়ে থাকতে হৰ, সকল কাজ কী করে বুদ্ধিপূর্বক করতে হয়, এইসব তাদের বুঝিয়ে দিই। অনেক সময়ে আমরা তাদের মধ্যে গিয়েই বাস করি, নাটক-অভিনয় করি, দেশের অবস্থার কথা বলি।”