পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাশিয়ার চিঠি @రి ఫి অতলাস্তিক মহাসাগর রাশিয়া থেকে ফিরে এসেছি, চলেছি আমেরিকার পথে । রাশিয়াযাত্রায় আমার একটিমাত্র উদ্দেপ্ত ছিল— ওখানে জনসাধারণের শিক্ষাবিস্তারের কাজ কিরকম চলছে আর ওরা তার ফল কিরকম পাচ্ছে সেইটে অল্প সময়ের মধ্যে দেখে নেওয়া । আমার মত এই যে, ভারতবর্ষের বুকের উপর যত-কিছু দুঃখ আজ অভ্ৰভেদী হয়ে দাড়িয়ে আছে তার একটিমাত্র ভিত্তি হচ্ছে অশিক্ষণ । জাতিভেদ, ধর্মবিরোধ, কর্মজড়তা, আর্থিক দৌর্বল্য— সমস্তই অঁাকড়ে আছে এই শিক্ষার অভাবকে । সাইমন কমিশনে ভারতবর্ষের সমস্ত অপরাধের তালিকা শেষ করে ব্রিটিশ শাসনের কেবল একটিমাত্র অপরাধ কবুল করেছে। সে হচ্ছে যথেষ্ট পরিমাণে শিক্ষাবিধানের ক্রটি। কিন্তু আরকিছু বলবার দরকার ছিল না। মনে করুন যদি বলা হয়— গৃহস্থ সাবধান হতে শেখে নি ; এক ঘর থেকে আর-এক ঘরে যেতে চৌকাঠে হু চট লেগে সে আছাড় খেয়ে পড়ে ; জিনিসপত্র কেবলই হারায়, তার পরে খুঁজে পায় না ; ছায়া দেখলে তাকে জুজু বলে ভয় করে ; নিজের ভাইকে দেখে চোর এসেছে বলে লাঠি উচিয়ে মারতে যায় ; কেবলই বিছানা আঁকড়ে পড়ে থাকে ; উঠে হেঁটে বেড়াবার সাহসই নেই ; খিদে পায়, কিন্তু খাবার কোথায় আছে খুঁজে পায় না; অদৃষ্টের উপর অন্ধ নির্ভর করে থাকা ছাড়া অন্য সমস্ত পথ তার কাছে লুপ্ত ; অতএব নিজের গৃহস্থালির তদারকের ভার তার উপর দেওয়া চলে না— তার পরে সবশেষে গলা অত্যস্ত থাটো করে যদি বলা হয় ‘আমি ওর বাতি নিবিয়ে রেখেছি’— তা হলে সেটা কেমন হয়। ওরা একদিন ডাইনী বলে নিরপরাধাকে পুড়িয়েছে, পাপিষ্ঠ বলে বৈজ্ঞানিককে মেরেছে, ধর্মমতের স্বাতন্ত্র্যকে অতি নিষ্ঠুরভাবে পীড়ন করেছে, নিজেরই ধর্মের ভিন্ন সম্প্রদায়ের রাষ্ট্রাধিকারকে খর্ব করে রেখেছে, এ ছাড়া কত অন্ধতা কত মূঢ়তা কত কদাচার মধ্যযুগের ইতিহাস থেকে তার তালিকা স্তুপাকার করে তোলা যায়। এ-সমস্ত দূর হল কী করে। বাইরেকার কোনো কোর্ট অফ ওয়ার্ডসের হাতে ওদের অক্ষমতার সংস্কারসাধনের ভার দেওয়া হয় নি ; একটিমাত্র শক্তি ওদের এগিয়ে দিয়েছে, সে হচ্ছে ওদের শিক্ষণ । --- জাপান এই শিক্ষার যোগেই অল্পকালের মধ্যেই দেশের রাষ্ট্রশক্তিকে সর্বসাধারণের ইচ্ছা ও চেষ্টার সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছে, দেশের অর্থ-উৎপাদনের শক্তিকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে। বর্তমান তুরস্ক প্রবলবেগে এই শিক্ষা অগ্রসর করে দিয়ে ধর্মান্ধতার প্রবল