পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|రిశి রবীন্দ্র-রচনাবলী কোথা থেকে জানি নে আমি এসেছি এই পৃথিবীর তীর্থে, আমার পথ আমার তীর্থদেবতার বেদীর কাছে । মানুষের দেবতাকে স্বীকার করে এবং প্রণাম করে যাব আমার জীবনদেবতা আমাকে সেই মন্ত্র দিয়েছেন। যখন আমি সেই দেবতার নির্মাল্য ললাটে পরে যাই তখন সব জাতের লোকই আমাকে ডেকে আসন দেয়, আমার কথা মন দিয়ে শোনে। যখন ভারতবর্ষীয়ের মুখোস পরে দাড়াই তখন বাধা বিস্তর। যখন আমাকে এরা মানুষরূপে দেখে তখনই এরা আমাকে ভারতবর্ষীয়রূপেই শ্রদ্ধা করে ; যখন নিছক ভারতবর্ষীয়রূপে দেখা দিতে চাই তখন এরা আমাকে মানুষরূপে সমাদর করতে পারে না। আমার স্বধৰ্ম পালন করতে গিয়ে আমার চলবার পথ ভুল-বোঝার দ্বারা বন্ধুর হয়ে ওঠে। আমার পৃথিবীর মেয়াদ সংকীর্ণ হয়ে এসেছে ; অতএব আমাকে সত্য হবার চেষ্টা করতে হবে, প্রিয় হবার নয়। আমার এখানকার খবর সত্য মিথ্যা নানাভাবে দেশে গিয়ে পৌছয় । সে সম্বন্ধে সব সময় উদাসীন থাকতে পারি নে বলে নিজের উপর ধিক্কার জন্মে। বার বার মনে হয়, বানপ্রস্থের বয়সে সমাজস্থের মতো ব্যবহার করতে গেলে বিপদে পড়তে হয় } যাই হোক এ দেশের এনর্মাস ডিফিকালটিজ এর কথা বইয়ে পড়েছিলুম, কানে শুনেছিলুম, কিন্তু সেই ডিফিকালটিজ অতিক্রমণের চেহারা চোখে দেখলুম। ইতি ৪ অক্টোবর ১৯৩০ ব্রেমেন জাহাজ আমাদের দেশে পলিটিক্সকে যারা নিছক পালোয়ানি বলে জানে সব-রকম ললিতকলাকে তারা পৌরুষের বিরোধী বলে ধরে রেখেছেন। এ সম্বন্ধে আমি আগেই লিখেছি। রাশিয়ার জার ছিল একদিন দশাননের মতো সম্রাট ; তার সাম্রাজ্য পৃথিবীর অনেকখানিকেই অজগর সাপের মতো গিলে ফেলেছিল, লেজের পাকে যাকে সে জড়িয়েছে তার হাড়গোড় দিয়েছে পিষে । প্রায় বছর-তেরো হল এরই প্রতাপের সঙ্গে বিপ্লবীদের ঝুটোপুট বেধে গিয়েছিল। সম্রাট যখন গুষ্টিযুদ্ধ গেল সরে তখনো তার সাঙ্গোপাঙ্গর দাপিয়ে বেড়াতে লাগল, তাদের অস্ত্র এবং উৎসাহ জোগালে অপর সাম্রাজ্যভোগীরা। বুঝতেই পারছ ব্যাপারখানা সহজ ছিল না। একদা যারা ছিল সম্রাটের উপগ্রহ, ধনীর দল, চাষীদের পরে যাদের ছিল অসীম প্রভূত্ব, তাদের সর্বনাশ বেধে গেল। লুটপাট কাড়াকড়ি চলল ;