পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাশিয়ার চিঠি 'වLණු দেশের লোকের দৈহিক ও মানসিক অবস্থার চরম দুঃখদৃপ্ত অনেককাল স্বচক্ষে দেখে আসছি। দরিদ্র্যে মানুষ কেবল যে মরে তা নয়, নিজেকে অবজ্ঞার যোগ্য করে তোলে। তাই সার জন সাইমন বললেন যে : In our view the most formidable of the evils from which India is suffering have their roots in social and economic customs of longstanding which can only be remedied by the action of the Indian people themselves. এটা হল অবজ্ঞার কথা। ভারতের প্রয়োজনকে তিনি যে আদর্শ থেকে বিচার করছেন সেটা তাদের নিজেদের আদর্শ নয়। প্রচুর ধন-উৎপাদনের জন্যে যে অবারিত শিক্ষা, যে স্থযোগ, যে স্বাধীনতা তাদের নিজেদের আছে, যে-সমস্ত সুবিধা থাকাতে তাদের জীবনযাত্রার আদর্শ জ্ঞানে কর্মে ভোগে নানা দিক থেকে প্রভূত পরিমাণে পরিপুষ্ট হতে পেরেছে, জীর্ণবস্ত্র শীর্ণতন্তু রোগব্লাস্ত শিক্ষাবঞ্চিত ভারতের পক্ষে সে অাদর্শ তারা কল্পনার মধ্যেই আনেন না— আমরা কোনোমতে দিনযাপন করব লোকবৃদ্ধি নিবারণ করে এবং খরচপত্র কমিয়ে, আর আজ র্তারা নিজের জীবিকার যে পরিস্ফীত অাদর্শ বহন করছেন তাকে চিরদিন বহুলপরিমাণে সম্ভব করে রাখব আমাদের জীবিকা খর্ব করে, এর বেশি কিছু ভাববার নেই। অতএব রেমেডি’র দায়িত্ব সম্পূর্ণ আমাদেরই হাতে, যার রেমেডিকে দুঃসাধ্য করে তুলেছে তাদের বিশেষ কিছু করবার নেই। মানুষ এবং বিধাতার বিরুদ্ধে এই-সমস্ত নালিশ ক্ষণস্ত করে রেখেই অন্তরের দিক থেকে আমাদের নিজাব পল্লীর মধ্যে প্রাণসঞ্চার করবার জন্যে আমার অতিক্ষুদ্র শক্তিকে কিছুকাল প্রয়োগ করছি। এ কাজে গবর্মেন্টের আহ্লকুল্য আমি উপেক্ষা করি নি, এমন-কি ইচ্ছা করেছি। কিন্তু ফল পাই নি, তার কারণ দরদ নেই। দরদ থাকা সম্ভব নয়— আমাদের অক্ষমতা, আমাদের সকলপ্রকার দুর্দশা, আমাদের দাবিকে ক্ষীণ করে দিয়েছে। দেশের কোনো যথার্থ কৃত্যকর্মে গবর্মেন্টের সঙ্গে আমাদের কর্মীদের উপযুক্ত যোগসাধন অসম্ভব বলেই অবশেষে স্থির করেছি। অতএব চৌকিদারদের উর্দির খরচ জুগিয়ে যে-কটা কড়ি বঁাচে তাই দিয়ে যা সম্ভব তাই করা যাবে, এই রইল কথা । রাজকীয় লোভ ও তৎপ্রস্থত দুর্বিষহ ঔদাসীন্যের চেহারাটা যখন মনের মধ্যে নৈরাপ্তের অন্ধকার ঘনিয়ে বসেছে এমন সময়েই রাশিয়ায় গিয়েছিলুম। যুরোপের অন্তান্ত দেশে ঐশ্বর্ষের আড়ম্বর যথেষ্ট দেখেছি ; সে এতই উত্তঙ্গ যে দরিদ্র দেশের ঈর্ষাও তার উচ্চ চূড়া পর্যন্ত পৌছতে পারে না। রাশিয়ায় সেই ভোগের