পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাশিয়ার চিঠি ©8) থাক, গুরুর মধ্যেই থাক, আর রাষ্ট্রনেতার মধ্যেই থাক, মচুন্যত্বহানির পক্ষে এমন উপজব কিছুই নেই। 峭 আমাদের সমাজে এই ক্লীবত্বস্বষ্টি বহুযুগ থেকে ঘটে আসছে এবং এর ফল প্রতিদিন দেখে আসছি। মহাত্মাঞ্জি যখন বিদেশী কাপড়কে অশুচি বলেছিলেন আমি তার প্রতিবাদ করেছিলাম ; আমি বলেছিলাম, ওটা আর্থিক ক্ষতিকর হতে পারে, অশুচি হতেই পারে না। কিন্তু আমাদের শাস্ত্রচালিত অন্ধ চিত্ত ভোলাতে হবে, নইলে কাজ পাৰ না— মকুন্তত্বের এমনতরো চিরস্থায়ী অবমাননা আর কী হতে পারে। নায়কচালিত দেশ এমনিভাবেই মোহাচ্ছন্ন হয়ে থাকে—এক জাদুকর যখন বিদায় গ্রহণ করে তখন আর-এক জাদুকর আর-এক মন্ত্র স্বষ্টি করে। ডিকুটেটরশিপ একটা মস্ত আপদ, সে কথা আমি মানি এবং সেই আপদের বহু অত্যাচার রাশিয়ায় আজ ঘটছে সে কথাও আমি বিশ্বাস করি । এর নঙৰ্থক দিকট জবরদস্তির দিক, সেটা পাপ । কিন্তু সদর্থক দিকটা দেখেছি, সেটা হল শিক্ষা, জবরদস্তির একেবারে উলটো। দেশের সৌভাগ্যস্থষ্টি-ব্যাপারে জনগণের চিত্ত সম্মিলিত হলে তবে সেটার ক্রিয়া সজীব ও স্থায়ী হয় ; নিজের একনায়কত্বের প্রতি যারা লুব্ধ, নিজের চিত্ত ছাড়া অন্য সকল চিত্তকে অশিক্ষা-দ্বারা আড়ষ্ট করে রাখাই তাদের অভিপ্রায়সিদ্ধির একমাত্র উপায়। জারের রাজত্বে শিক্ষার অভাবে জনগণ ছিল মোহাভিভূত, তার উপরে সর্বব্যাপী একটা ধৰ্মমূঢ়তা অজগর সাপের মতো সাধারণের চিত্তকে শত পাকে বেড়ে ধরেছিল। সেই মূঢ়তাকে সম্রাট অতিসহজে নিজের কাজে লাগাতে পারতেন। তখন য়িহুদির সঙ্গে খৃস্টানের, মুসলমানের সঙ্গে আর্মানির সকলপ্রকার বীভৎস উৎপাত ধর্মের নামে অনায়াসে ঘটানো যেতে পারত। তখন জ্ঞান ও ধর্মের মোহ দ্বারা আত্মশক্তিহারা শ্লথগ্রন্থি বিভক্ত দেশ বাহিরের শক্তির কাছে সহজেই অভিভূত ছিল। একনায়কত্বের চিরাধিপত্যের পক্ষে এমন অমুকুল অবস্থা আর কিছুই হতে পারে না। পূর্বতন রাশিয়ার মতোই আমাদের দেশে এই অবস্থা বহুকাল থেকে বর্তমান। আজ আমাদের দেশ মহাত্মাজির চালনার কাছে বশ মেনেছে, কাল তিনি থাকবেন না, তখন চালকত্বের প্রত্যাণীরা তেমনি করেই অকস্মাৎ দেখা দিতে থাকবে যেমন করে আমাদের দেশের ধর্মাভিভূতদের কাছে নূতন নূতন অবতার ও গুরু যেখানে-সেখানে উঠে পড়ছে। চীনদেশে আজ নায়কত্ব নিয়ে জনকয়েক ক্ষমতালোভী জবরদস্তদের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন প্রলয়সংঘর্ষ চলেইছে, কারণ, জনসাধারণের মধ্যে সে শিক্ষণ নেই যাতে তার নিজের সম্মিলিত ইচ্ছা-দ্বারা দেশের ভাগ্য নিয়মিত করতে পারে ; তাই সেখানে