পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

wථAb” রবীন্দ্র-রচনাবলী পল্লীসেবা প্রীনিকেতনের উৎসবে কথিত বেদে অনন্তস্বরূপকে বলেছেন আবিঃ, প্রকাশস্বরূপ । তার প্রকাশ আপনার মধ্যেই সম্পূর্ণ। তার কাছে মানুষের প্রার্থন এই যে : আবিরাবীর্ম এধি ! হে আবি,আমার মধ্যে তোমার আবির্ভাব হোক। অর্থাং, আমার আত্মায় অনন্তস্বরূপের প্রকাশ চাই । জ্ঞানে প্রেমে কর্মে আমার অভিব্যক্তি অনন্তের পরিচয় দেবে, এতেই আমার সার্থকতা । আমাদের চিত্তবৃত্তি থেকে, ইচ্ছাশক্তি থেকে, কর্মোন্তম থেকে, অপূর্ণতার আবরণ ক্রমে ক্রমে মোচন করে অনন্তের সঙ্গে নিজের সাধর্ম্য প্রমাণ করতে থাকব এই হচ্ছে মানুষের ধর্মসাধনা ৷ +. অন্য জীবজন্তু যেমন অবস্থায় সংসারে এসেছে সেই অবস্থাতেই তাদের পরিণাম । অর্থাৎ, প্রকৃতিই তাদের প্রকাশ করেছে এবং সেই প্রকৃতির প্রবর্তন মেনেই তারা প্রাণযাত্র নির্বাহ করে, তার বেশি কিছু নয়। কিন্তু, নিজের ভিতর থেকে নিজের অন্তরতর সত্যকে নিরস্তর উদঘাটিত করতে হবে নিজের উদ্যমে— মানুষের এই চরম অধ্যবসায়। সেই আত্মোপলব্ধ সত্যেই তার প্রকাশ, প্রকৃতিনিয়ন্ত্রিত প্রাণযাত্রায় নয়। তাই তার দুরূহ প্রার্থনা এই যে, সকল দিকেই অনস্তকে যেন প্রকাশ করি। তাই সে বলে, ভূমৈব স্থখং, মহত্বেই স্থখ, নাল্পে স্থখমস্তি, অল্প-কিছুতেই মুখ নেই। মানুষের পক্ষে তাই সকলের চেয়ে দুৰ্গতি যখন আপনার জীবনে সে আপন অন্তর্নিহিত ভূমীকে প্রকাশ করতে পারলে না— বাধাগুলো শক্ত হয়ে রইল। এই তার পক্ষে মৃত্যুর চেয়ে বড়ো মৃত্যু । আহারে বিহারে ভোগে বিলাসে সে পরিপুষ্ট হতে পারে ; কিন্তু জ্ঞানের দীপ্তিতে, ত্যাগের শক্তিতে, প্রেমের বিস্তারে, কর্মচেষ্টার সাহসে সে যদি আপনার প্রবুদ্ধ মুক্তস্বরূপ কিছু পরিমাণেও প্রকাশ করতে না পারে তবে তাকেই বলে ‘মহতী বিনষ্ট’। সে বিনষ্টি জীবের মৃত্যুতে নয়, আত্মার অপ্রকাশে । সভ্যতা যাকে বলি তার এক প্রতিশব্দ হচ্ছে 'ভূমাকে প্রকাশ’ । মানুষের ভিতরকার যে নিহিতার্থ যা তার গভীর সত্য, সভ্যতায় তারই আবিষ্কার চলছে। সভ্য মানুষের শিক্ষাবিধি এত ব্যাপক, এত দুরূহ এইজন্তেই। তার সীমা কেবলই অগ্রসর হয়ে চলেছে ; সভ্য মানুষের চেষ্টা প্রকৃতিনির্দিষ্ট কোনো গণ্ডীকে চরম বলতে চাচ্ছে না। মামুষের মধ্যে নিত্যপ্রসার্ধমাণ সম্পূর্ণতার যে আকাঙ্ক্ষা তার দুটাে দিক, কিন্তু তারা পরস্পরযুক্ত। একটা ব্যক্তিগত পূর্ণতা, আর-একটা সামাজিক, এদের মাঝখানে ভেদ নেই। ব্যক্তিগত উৎকর্ষের ঐকাস্তিকতা অসম্ভব । মানবলোকে যারা