পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՓԳb- রবীন্দ্র-রচনাবলী সব কাজে সে এত গৌরব বোধ করে যে চাষের খেতে তার অবজ্ঞা | আধুনিক বাংলাভাষায় সে যাকে একটা কুশ্রাব্য নাম দিয়েছে কষ্ট, হাল-লাঙলের সঙ্গে তার কোনো যোগ নেই এবং গোরুকে তার বাহন বললে ব্যঙ্গ করা হয়। বলা বাহুল্য, দূরতম তারায় মাহুষের নূ্যনতম প্রয়োজন, সেই তারার যে আলোকরশ্মি চার-পাঁচ হাজার এবং ততোধিক বৎসর ধরে ব্যোমবিহারী, গৃহত্যাগী, তারই দৌড় মাপতে মানুষের দিন যায়, তার রাত কাটে । তা ছাড়া মানুষ অকারণে কথার সঙ্গে কথার বিমুনি করে কবিতাও লেখে ; এমন-কি, যারা আধপেটা খেয়ে কৃশতা তারাও বাহবা দেয়। এর থেকেই আন্দাজ করি, মানুষের অন্নের খেত প্রকৃতির এলেকায় থাকতে পারে, দেহের দ্বারে পেয়াদার তাগিদে তার খাজনাও দিতে হয়, কিন্তু যেখানে মানুষের বাস্তুভিটে সেই লাখেরাজ দেবত্রভূমি প্রকৃতির এলেকার বাইরে। সেখানে জোর তলবের দায় নেই, সেখানে সকলের চেয়ে বড়ো দায়িত্ব স্বাধীন দায়িত্ব ; তাকে বলব আদশের দায়িত্ব, মনুষ্যত্বের দায়িত্ব। দেহের দিক থেকে মানুষ যেমন উর্ধ্বশিরে নিজেকে টেনে তুলেছে খণ্ডভূমির থেকে বিশ্বভূমির দিকে, নিজের জানাশোনাকেও তেমনি স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে জৈবিক প্রয়োজন থেকে, ব্যক্তিগত অভিরুচির থেকে। জ্ঞানের এই সম্মানে মানুষের বৈষয়িক লাভ হোক বা না হোক, আনন্দলাভ হল। এইটেই বিস্ময়ের কথা । পেট না ভরিয়েও কেন হয় আনন্দ । বিষয়কে বড়ো করে পায় বলে আনন্দ নয়, আপনাকেই বড়ো করে, সত্য করে পায় বলে আনন্দ। মানবজীবনের যে বিভাগ অহৈতুক অম্বুরাগের অর্থাৎ আপনার বাহিরের সঙ্গে অন্তরঙ্গ যোগের, তার পুরস্কার আপনারই মধ্যে। কারণ, সেই যোগের প্রসারেই আত্মার সত্য । ন বা অরে পুত্রস্ত কামায় পুত্র: প্রিয়োভবতি, আত্মনস্তু কামায় পুত্র: প্রিয়োভবতি । জীবলোকে চৈতন্তের নীহারিক অস্পষ্ট আলোকে ব্যাপ্ত। সেই নীহারিক মানুষের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়ে উজ্জল দীপ্তিতে বললে, “অয়মহং ভোঃ ! এই-ষে আমি।” সেই দিন থেকে মানুষের ইতিহাসে নানা ভাবে নানা রূপে নানা ভাষায় এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া চলল “আমি কী” । ঠিক উত্তরটিতে তার আনন্দ, তার গৌরব। জন্তুর উত্তর পাওয়া যায় তার দৈহিক ব্যবস্থার যথাযোগ্যতায় । সনাতন গণ্ডারের মতো স্কুল ব্যবহারে গণ্ডার যদি কোনো বাহ বাধা না পায় তা হলে আপন সার্থক্য সম্বন্ধে তার কোনো সংশয় থাকে না। কিন্তু, মাকুব কী করে হবে মানুষের মতো তাই নিয়ে বর্বরদশা থেকে সভ্য অবস্থা পর্যন্ত তার চিস্তা ও প্রয়ালের অন্ত নেই। সে বুঝেছে, সে সহজ নয়, তার মধ্যে একটা রহস্ত আছে ; এই রহস্তের আবরণ উদঘাটিত হতে হতে তবে সে