পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\Obo o রবীন্দ্র-রচনাবলী মধ্যে, কিন্তু আবদ্ধ হয় নি। আবার আমরাও দেশের ভবিষ্যতের জন্য বর্তমানকে উৎসর্গ করছি। সেই ভবিষ্যৎকে ব্যক্তিগতরুপে আমরা ভোগ করব না। যে তপস্বীরা অন্তহীন ভবিষ্যতে বাস করতেন, ভবিষ্যতে র্যাদের আনন্দ, র্যাদের আশা, র্যাদের গৌরব, মামুষের সভ্যতা তাদেরই রচনা। তাদেরই স্মরণ করে মানুষ আপনাকে জেনেছে অমৃতের সন্তান ; বুঝেছে যে, তার দৃষ্টি, তার স্বষ্টি, তার চরিত্র মৃত্যুকে পেরিয়ে । মৃত্যুর মধ্যে গিয়ে যারা অমৃতকে প্রমাণ করেছেন তাদের দানেই দেশ রচিত। ভাবীকালবাসীসা, শুধু আপন দেশকে নয়, সমস্ত পৃথিবীর লোককে অধিকার করেছেন । তাদের চিন্তা, তাদের কর্ম, জাতিবর্ণনির্বিচারে সমস্ত মানুষের। সবাই তাদের সম্পদের উত্তরাধিকারী। র্তারাই প্রমাণ করেন, সব মানুষকে নিয়ে, সব মানুষকে অতিক্রম করে, সীমাবদ্ধ কালকে পার হয়ে এক-মানুষ বিরাজিত। সেই মানুষকেই প্রকাশ করতে হবে, শ্রেষ্ঠ স্থান দিতে হবে বলেই মানুষের বাস দেশে । অর্থাৎ, এমন জায়গায় যেখানে প্রত্যেক মামুষের বিস্তার খণ্ড খণ্ড দেশকালপাত্র ছাড়িয়ে— যেখানে মানুষের বিদ্যা, মামুষের সাধনা সত্য হয় সকল কালের সকল মানুষকে নিয়ে। ভবিষ্কংকাল অসীম, অতীতকালও তাই। এই দুই দিকে মানুষের মন প্রবলভাবে আকৃষ্ট । পুরুষ এবেদং সৰ্বং যদভূতং যচ্চ ভব্যম্ । যা ভূত, যা ভাবী, এই সমস্তই সেই পুরুষ। মানুষ ভাবতে ভালোবাসে, কোনো-এক কালে তার শ্রেষ্ঠতার আদর্শ পূর্বেই বিষয়ীকৃত। তাই প্রায় সকলজাতীয় মানুষের পুরাণে দেখা যায় সত্যযুগের কল্পনা অতীতকালে। সে মনে করে, যে আদর্শের উপলব্ধি অসম্পূর্ণ কোনো-এক দূরকালে তা পরিপূর্ণ অখণ্ড বিশুদ্ধ আকারে । সেই পুরাণের বৃত্তান্তে মানুষের এই আকাঙ্ক্ষাটি প্রকাশ পায় যে, অনাদিতে যা প্রতিষ্ঠিত অসীমে তাই প্রমাণিত হতে থাকবে । যে গানটি পূর্বেই সম্পূর্ণ রচিত গাওয়ার দ্বারাই সেটা ক্রমশ প্রকাশমান, এও তেমনি । মনুষ্যত্বের আদর্শ এক কোটিতে সমাপ্ত, আর-এক কোটিতে উপলভ্যমান। এখনকার দিনে মানুষ অতীতকালে সত্যযুগকে মানে না, তবু তার সকলপ্রকার শ্রেয়োমুষ্ঠানের মধ্যে প্রচ্ছন্ন থাকে অনাগতকালে সত্যযুগের প্রত্যাশা। কোনো ব্যক্তি নাস্তিক হতে পারে কিন্তু সেই নাস্তিক যাকে সত্য বলে জানে দূরদেশে ভাবীকালে সেও তাকে সার্থক করবার জন্তে প্রাণ দিতে পারে, এমন ধৃষ্টাস্তের অভাব নেই। অগোচর ভবিষ্যতেই নিজেকে সত্যতররূপে অনুভব করে বলেই তার প্রত্যক্ষ বর্তমানকে বিসর্জন দেওয়া সে ক্ষতি মনে করে না। ত্রিপাদস্তামৃতং দিবি। পূর্ণ পুরুষের অধিকাংশ এখনো আছে অব্যক্ত । র্তাকেই ব্যক্ত করবার প্রত্যাশা নিয়ত চলেছে ভবিষ্যতের দিকে । পূর্ণপুরুষ আগন্তুক। তার রখ ধাবমান, কিন্তু তিনি এখনো এসে পৌছন নি। বরযাত্রীরা