পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পত্রপুট २> মেঘের গায়ে গায়ে দগদগ করছে লাল আলো, তার ছিন্ন ত্বকের রক্তরেখা । বিদ্যুং লাফ মারছে মেঘের থেকে মেঘে, চালাচ্ছে ঝকৃঝকে খাড়া ; বজ্রশব্দে গর্জে উঠছে দিগন্ত ; উত্তরপশ্চিমের আম-বাগানে শোনা গেল হাফ-ধরা একটা আওয়াজ, এসে পড়ল পাটকিলে রঙের অন্ধকার, শুকনো ধুলোর দম-আটকানো তুফান। ছুড়ে মারে টুকরো ডাল শুকনো পাতা, চোখে-মুখে ছিটোতে থাকে কাকরগুলো আকাশটা ভূতে-পাওয়া। পথিক উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ছে মাটিতে, ঘন আঁধির ভিতর থেকে উঠছে ঘরহারা গোরুর উতরোল ডাক, দূরে নদীর ঘাটে হৈ হৈ রব। বোঝা গেল না কোন দিকে হুড়মুড় দুড়দাড় ক’রে কিসের ওটা ভাঙচুর। দুরন্থর করে বুক, কী হল, কী হল ভাবনা । কাকগুলো পড়ছে মুখ থুবড়িয়ে মাটিতে, ঠোট দিয়ে ঘাস ধরছে কামড়িয়ে, ধাক্কা খেয়ে যাচ্ছে সরে সরে, ঝটুপটু করছে পাখাদুটো। নদীপথে ঝড়ের মুখে বঁাশঝাড়ের লুটোপুটি, ডালগুলো ডাইনে বায়ে আছাড় খায়, দোহাই পড়ে মরিয়া হয়ে। তীক্ষু হাওয়া সাই সাই শান দিচ্ছে আর চালাচ্ছে ছুরি অন্ধকারের পাজরের ভিতর দিয়ে। জলে স্থলে শূন্যে উঠেছে ঘুরপাক-খাওয়া আতঙ্ক ।