পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানুষের ধর্ম 8 o’, শ্রেষ্ঠতার উপলব্ধি । উভয়ের মধ্যে পাশাপাশি কিরকম বিপরীত অসংগতি দেখা যায় একটা তার দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক । কয়েক বৎসর পূর্বে লণ্ডনের টাইমস্ পত্রে একটি সংবাদ বেরিয়েছিল, আমেরিকার নেশন পত্র থেকে তার বিবরণ পেয়েছি। বায়ুপোতে চড়ে ব্রিটিশ বায়ুনাবিকসৈন্ত আফগানিস্থানে মাহ স্থা গ্রাম ধ্বংস করতে লেগেছিল ; শতন্ত্রীবর্ষিণী একটা বায়ুতরী বিকল হয়ে গ্রামের মাঝখানে গেল পড়ে। একজন আফগান মেয়ে নাবিকদের নিয়ে গেল নিকটবর্তী গুহার মধ্যে, একজন মালিক তাদের রক্ষার জন্যে গুহার দ্বার আগলিয়ে রইল। চল্লিশজন ছুরি আস্ফালন করে তাদের আক্রমণ করতে উদ্যত, মালিক তাদের ঠেকিয়ে রাখলে। তখনো উপর থেকে বোমা পড়ছে, ভিড়ের লোক ঠেলাঠেলি করছে গুহায় আশ্রয় নেবার জন্যে। নিকটবর্তী স্থানের অন্য কয়েকজন মালিক এবং একজন মোল্লা এদের আনুকূল্যে প্রবৃত্ত হল। মেয়েরা কেউ কেউ নিলে এদের আহারের ভার। অবশেষে কিছুদিন পরে মাহ স্বদের ছদ্মবেশ পরিয়ে এরা তাদের নিরাপদ স্থানে পৌছিয়ে দিল । এই ঘটনার মধ্যে মানবস্বভাবের দুই বিপরীত দিক চূড়ান্তভাবেই দেখা দিয়েছে। এরোপ্লেন থেকে বোমাবর্ষণে দেখা যায় মানুষের শক্তির আশ্চর্য সমৃদ্ধি, ভূতল থেকে নভস্তল পর্যন্ত তার সশস্ত্র বাহুর বিপুল বিস্তার। আবার হননে-প্রবৃত্ত শক্রকে ক্ষমা করে তাকে রক্ষা করতে পারল, মানুষের এই আর-এক পরিচয় । শক্রহননের সহজ প্রবৃত্তি মানুষের জীবধর্মে, তাকে উত্তীর্ণ হয়ে মানুষ অদ্ভূত কথা বললে, “শক্রকে ক্ষমা করে।” এ কথাটা জীবধর্মের হানিকর, কিন্তু মানবধর্মের উৎকর্ষলক্ষণ । আমাদের ধর্মশাস্ত্রে বলে, যুদ্ধকালে যে মানুষ রথে নেই, যে আছে ভূতলে, রথী তাকে মারবে না ! যে ক্লাব, যে কৃতাঞ্জলি, যে মুক্তকেশ, যে আসীন, যে সামুনয়ে বলে ‘আমি তোমারই’, তাকেও মারবে না। যে ঘুমচ্ছে, যে বর্মহীন, যে নগ্ন, যে নিরস্ত্র, যে অযুধ্যমান, যে যুদ্ধ দেখছে মাত্র, যে অন্তের সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত, তাকেও মারবে না। যার অস্ত্র গেছে ভেঙে, যে শোকার্ত, যে পরিক্ষত, ভীত, যে পরাবৃত্ত, সতের ধর্ম অনুসরণ করে তাকেও মারবে না । সতের ধর্ম বলতে বোঝায় মানুষের মধ্যে যে সত্য তারই ধর্ম, মাহুষের মধ্যে যে মহৎ র্তারই ধর্ম। যুদ্ধ করতে গিয়ে মানুষ যদি তাকে অস্বীকার করে তবে ছোটো দিকে তার জিত হলেও বড়ো দিকে তার হার । উপকরণের দিকে তার সিদ্ধি, অমৃতের দিকে সে বঞ্চিত ; এই অমৃতের আদর্শ মাপজোখের বাইরে। স্বৰ্ণলঙ্কার মাপজোখ চলে। দশাননের মুগু ও হাত গণনা করে বিস্মিত হবার কথা । তার অক্ষৌহিণী সেনারও সংখ্যা আছে, জয়বিস্তারের পরিধি-দ্বারা সেই সেনার