পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী وق\ e 8 শুনেছে সে সংগীতের মতো। দহিয়াছে অগ্নি তারে, বিদ্ধ করিয়াছে শূল, ছিন্ন তারে করেছে কুঠারে, সর্বপ্রিয়বস্তু তার অকাতরে করিয়া ইন্ধন চিরজন্ম তারি লাগি জেলেছে সে হোমহুতাশন । শুনিয়াছি, তারি লাগি রাজপুত্র পরিয়াছে ছিন্ন কস্থা, বিষয়ে বিরাগী পথের ভিক্ষুক। মহাপ্রাণ সহিয়াছে পলে পলে প্রত্যহের কুশাঙ্কুর । তারি পদে মগনী সঁপিয়াছে মান, ধনী সঁপিয়াছে ধন, বীর সপিয়াছে আত্মপ্রাণ । শুধু জানি সে বিশ্বপ্রিয়ার প্রেমে ক্ষুদ্রতারে দিয়া বলিদান বর্জিতে হইবে দূরে জীবনের সর্ব অসম্মান, সম্মুখে দাড়াতে হবে উন্নত মস্তক উচ্চে তুলি যে মস্তকে ভয় লেখে নাই লেখা, দাসত্বের ধূলি আঁকে নাই কলঙ্ক তিলক । ভিন বৃহদারণ্যকে একটি আশ্চর্য বাণী আছে— অথ যোহন্তাং দেবতাম্ উপাস্তে অন্তোহলে অন্তোহহম্ অস্বীতি ন স বেদ, যথা পশুরেবং স দেবানাম । যে মানুষ অন্য দেবতাকে উপাসনা করে সেই ‘দেবতা অন্য আর আমি অন্য এমন কথা ভাবে সে তো দেবতাদের পশুর মতোই। অর্থাৎ, সেই দেবতার কল্পনা মানুষকে আপনার বাইরে বন্দী করে রাখে ; তখন মানুষ আপন দেবতার দ্বারাই আপন আত্মা হতে নির্বাসিত, অপমানিত। এই যেমন শোনা গেল উপনিষদে আবার সেই কথাই আপন ভাষায় বলছে নিরক্ষর অশাস্ত্রজ্ঞ বাউল। সে আপন দেবতাকে জানে আপনার মধ্যেই, তাকে বলে মনের মানুষ । বলে, “মনের মানুষ মনের মাঝে করো অন্বেষণ।” মানুষের ইতিহাসে এমন অনেক ধর্মসম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়েছে যারা কাঠ-পাথর-পূজাকে