পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

338 রবীন্দ্র-রচনাবলী সোহহংতত্ত্ববর্জিত হয়ে পগুলোকের সাথে এক হয়ে যেত। তাও নয়, জাপল সত্য হতে স্খলিত হয়ে বঁাচতেই পারত না । ডাক্তার বলেন, মামুষের দেহে পশুরক্ত সঞ্চার করলে তাতে তার প্রাণবৃদ্ধি না হয়ে প্রাণনাশ হয়। পশুসমাজ পণ্ডভাবেই চিরদিন বাচতে পারে, মানুষের সমাজ পণ্ড হয়ে বাঁচতেই পারে না। তার্কিক বলবে, নরলোকে তো অনেক পশু আরামেই বেড়ে ওঠে। শরীরে ফোড়াও তো বাড়ে। আশপাশের চেয়ে তার উন্নতি বেশি বই কম নয়। সমস্ত দেহে স্বাস্থ্যের গৌরব সেই ফোড়াকে যদি ছাড়িয়ে না যায় তা হলে সে মারে এবং মেরে মরে । প্রকৃতিস্থ সমাজ অনেক পাপ সইতে পারে, কিন্তু যখন তার বিকৃতিটাই হয়ে ওঠে প্রধান তখন চিন্তায় ব্যবহারে সাহিত্যে শিল্পকলায় পশুরক্তস্রোত আত্মস্থ করে সমাজ বেশিদিন বঁাচতেই পারে না। বিলাসোন্মত্ত রোম কি আপন ঐশ্বর্ষের মধ্যেই পাকা ফলে কীটের মতো মরে নি। কালিদাস রঘুবংশের যে পতনের ছবি দিয়েছেন সে কি মানুষের জীবনে পশুপ্রবেশের ফলেই না । অথর্ববেদে শুধু কেবল সত্য ও ঋতের কথা নেই, আছে রাষ্ট্রের কথাও । জনসংঘের শ্রেষ্ঠ রূপ প্রকাশ করবার জন্যে তার রাষ্ট্র। ছোটো টবের বাইরে বনস্পতি যদি তার হাজার শিকড় মেলতে না পারে তা হলে সে বেঁটে হয়ে, কাঠি হয়ে থাকে। রাষ্ট্রের প্রশস্ত ভূমি না পেলে জনসমূহ পৌরুষবর্জিত হয়ে থাকে। আপনার মধ্যে যে ভূমাকে প্রমাণ করবার দায়িত্ব মানুষের, সমস্ত জাতি বৃহৎ জীবনযাত্রায় তার থেকে বঞ্চিত হলে ইতিহাসে ধিক্‌কৃত হয়। সকলের মাঝখানে সকল কালের সম্মুখে উঠে দাড়িয়ে সে বলতে পারে না "সোহহম”, বলতে পারে না “আমি আছি আমার মহিমায়, যে আমি কেবল আজকের দিনের জন্য নয়, যার অগত্মঘোষণা ভাবীকালের তোরণে তোরণে ধ্বনিত হতে থাকবে"। ইতিহাসের সেই ধিক্কার বহুকালের স্বপ্তিমগ্ন এসিয়া-মহাদেশের বক্ষে দিয়েছে আজ আঘাত ; সকল দিকেই শুনছি জনগণের অন্তর্যামী মহান পুরুষ তামসিকতার বন্দীশালার শৃঙ্খলে দিয়েছেন ঝংকার, তার প্রকাশের তপোদ্যপ্তি জলে উঠেছে তমস: পরস্তাৎ । রব উঠেছে, শুখস্তু বিশ্বে— শোনো বিশ্বজন, তার আহবান শোনো, যে আহানে ভয় যায় ছুটে, স্বার্থ হয় লজ্জিত, মৃত্যুঞ্জয় শৃঙ্গধানি করে ওঠেন মৃত্যুদুঃখবন্ধুর অমৃতের পথে । * - I ভূম থেকে উৎশিষ্ট যে শ্রেষ্ঠতার কথা অথর্ববেদ বলেছেন সে কোনো একটিমাত্র বিশেষ সিদ্ধিতে নয়। মানুষের সকল তপস্যাই তার মধ্যে, মানুষের বীর্যং লক্ষ্মৗর্বলং সমস্ত তার অন্তর্গত। মহন্তত্বের বহুধা বৈচিত্র্যকে একটিমাত্র বিন্দুতে সংহত করে নিশ্চল করলে হয়তো তার আত্মভোলা একটা আনন্দ আছে। কিন্তু, ততঃ কিম । কী