পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8めぐり রবীন্দ্র-রচনাবলী সত্তার মধ্যে দেখা দিল একটি আস্তরিক সত্য। প্রাণ আস্তরিক। যেহেতু সেই প্রাণকণা জড়পুঞ্জের তুলনায় দৃপ্তত অতি ক্ষুদ্র এবং যেহেতু স্বদীর্ঘকালের এক প্রান্তে তার সদ্য জন্ম, তাই তাকে হেয় করবে কে। মূকতার মধ্যে এই-যে অর্থ অবারিত হল তার থেকে মানুষ বিরাট প্রাণের রূপ দেখলে ; বললে, যদিদং কিঞ্চ সৰ্বং প্রাণ এজতি নিঃস্থতম্। যা-কিছু সমস্তই প্রাণ থেকে নিঃস্থত হয়ে প্রাণে কম্পিত হচ্ছে। আমরা জড়কে তথ্যরূপে জানি, কেননা সে যে বাইরের। কিন্তু, প্রাণকে আমাদের অন্তর থেকে জানি সত্যরূপে। প্রাণের ক্রিয়া অস্তরে অন্তরে— তার সমস্তটাই গতি । তাই চলার একটিমাত্র ভাষা আমাদের কাছে অব্যবহিত, সে আমাদের প্রাণের ভাষা। চলা ব্যাপারকে অন্তর থেকে সত্য করে চিনেছি নিজেরই মধ্যে। বিশ্বে অবিশ্রাম চলার যে উদ্যম তাকে উত্তাপই বলি, বিদ্যুৎই বলি, সে কেবল একটা কথা মাত্র। যদি বলি, এই চলার মধ্যে আছে প্রাণ, তা হলে এমন-কিছু বলা হয় আমার অভিজ্ঞতার মধ্যে যার অর্থ আছে । সেই সঙ্গে এও বুঝি, আমার প্রাণ যে চলছে সেও ঐ বিশ্বপ্রাণের চলার মধ্যেই। প্ৰাণগতির এই উদ্যম নিখিলে কোথাও নেই, কেবল আকস্মিকভাবে আছে প্রাণীতে— এমন খাপছাড়া কথা আমাদের মন মানতে চায় না, যে মন সমগ্রতার ভূমিকায় সত্যকে শ্রদ্ধা জানায়। o উপনিষদ বলেছেন, কে হেবান্তাৎ ক: প্রাণ্যাৎ যদেষ আকাশ আনন্দো ন দ্যাৎ । একটা কীটও প্রাণের ইচ্ছা করত কিসের জোরে, যদি প্রাণের আনন্দ সমস্ত আকাশে না থাকত। দেশালাইয়ের মুখে একটি শিখা এক মুহূর্তের জন্তেও জলে কী করে, যদি সমস্ত আকাশে তার সত্য ব্যাপ্ত না থাকে। প্রাণের মধ্যে সমস্ত স্বষ্টির একটি অন্তরতর অর্থ পাওয়া গেল, সেই অর্থকে বলি ইচ্ছা। জড় মূক হয়ে ছিল, এই ইচ্ছার ভাষা জানাতে পারে নি ; প্রাণ এসে ইচ্ছার বার্তা প্রকাশ করলে। যে বার্তা গভীরে নিহিত ছিল তাই উচ্ছসিত হয়ে উঠল। - ছাত্র বহুদিন বহু প্রয়াসে অক্ষর শিখল, বানান শিখল, ব্যাকরণ শিখল, অনেক কাগজে অনেক আঁকাবঁকা অসম্পূর্ণ নিরর্থক লেখা শিখল, উপকরণ ব্যবহার করল ও বর্জন করল বিস্তর ; অবশেষে কবিরূপে যে মুহূর্তে সে তার প্রথম কবিতাটি লিখতে পেরেছে সেই মুহূর্তে ঐ একটি লেখায় এতদিনকার পুঞ্জ পুঞ্জ বাক্যহীন উপকরণের প্রথম অর্থটুকু দেখা দিল। জগতের বিপুল অভিব্যক্তিতে প্রথম অর্থ দেখলুম প্রাণকণায়, তার পরে জন্তুতে, তার পরে মানুষে। বাহির থেকে অস্তরের দিকে একে একে মুক্তির দ্বার খুলে যেতে লাগল। মানুষে এসে যখন ঠেকল তখন যবনিকা উঠতেই জীবকে দেখলুম তার ভূমায় । দেখলুম রহস্তময় ষোগের তত্ত্বকে, পরম ঐক্যকে । মানুষ বলতে