পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পত্রপুট ©☾ তখন ঘণ্টা গিয়েছে বেজে, ফুরিয়েছে বেচাকেনার প্রহর । অকালবসন্তে জেগেছিল ভোরের কোকিল ; সেদিন তার চড়িয়েছি সেতারে, গানে বসিয়েছি সুর। যাকে শোনাব তার চুল যখন হল বাধা, বুকে উঠল জাফরানি রঙের আঁচল তখন ঝিকিমিকি বেলা, করুণ ক্লাস্তি লেগেছে মুলতানে । ক্রমে ধূসর আলোর উপরে কালো মরচে পড়ে এল। থেমে-যাওয়া গানখানি নিভে-যাওয়া প্রদীপের ভেলার মতো ডুবল বুঝি কোন একজনের মনের তলায়, উঠল বুঝি তার দীর্ঘনিশ্বাস, কিন্তু জালানো হল না আলো । এ নিয়ে আজ নালিশ নেই আমার। বিরহের কালোগুহা ক্ষুধিত গহবর থেকে ঢেলে দিয়েছে ক্ষুভিত স্বরের ঝন রাত্রিদিন । সাত রঙের ছটা খেলেছে তার নাচের উড়নিতে সারাদিনের সূর্যালোকে, নিশীথরাত্রের জপমন্ত্র ছন্দ পেয়েছে তার তিমিরপুঞ্জ কলোচ্ছল ধারায় । আমার তপ্ত মধ্যাহের শূন্যতা থেকে উচ্ছসিত গৌড়-সারঙের আলাপ । আজ বঞ্চিত জীবনকে বলি সার্থক— নিঃশেষ হয়ে এল তার দুঃখের সঞ্চয় মৃত্যুর অর্ঘ্যপাত্রে, তার দক্ষিণা রয়ে গেল কালের বেদিপ্রাস্তে ।