পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

86९ রবীন্দ্র-রচনাবলী পরিদর্শন করেন। এই পর্যটনের বিবরণ বিশ্বভারতী-কর্তৃক প্রকাশিত Letters from Russia পুস্তকের পরিশিষ্টে লিপিবদ্ধ আছে। রাশিয়া রবীন্দ্রনাথকে কোন ভাবে উদবোধিত করিয়াছিল, রাশিয়া-দর্শনের অব্যবহিত পরে লিখিত অন্যান্য চিঠিতেও স্থানে স্থানে তাহ দেখিতে পাওয়া যায়— [ పెరిe ] ধনীপরিবারের ব্যক্তিগত অমিতব্যয়িতার উপরে এবার আমার আস্তরিক বৈরাগ্য হয়েছে। দেনাশোধের ভাবনা ঘুচে গেলেই দেনা বাড়াবার পথ একেবারে বন্ধ করতে হবে। তা ছাড়া নিজেদের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমাদের গরিব চাষি প্রজাদের পরে যেন আর চাপাতে না হয়। এ কথা আমার অনেক দিনের পুরোনো কথা। বহুকাল থেকেই আশা করেছিলুম, আমাদের জমিদারি যেন আমাদের প্রজাদেরই জমিদারি হয়— আমরা যেন ট্রসটির মতো থাকি। অল্প কিছু খোরাক-পোশাক দাবি করতে পারব, কিন্তু সে ওদেরই অংশিদারের মতো। কিন্তু দিনে দিনে দেখলুম, জমিদারি-রথ সে রাস্তায় গেল না— তার পরে যখন দেনার অঙ্ক বেড়ে চলল তখন মনের থেকেও সংকল্প সরাতে হল। এতে করে দুঃখ বোধ করেছি— কোনো কথা বলি নি। এবার যদি দেন শোধ হয় তা হলে আর-একবার আমার বহুদিনের ইচ্ছা পূর্ণ করবার আশা করব। আমি যা বহুকাল ধ্যান করেছি রাশিয়ায় দেখলুম, এরা তা কাজে খাটিয়েছে ; আমি পারি নি বলে দুঃখ হল। কিন্তু হাল ছেড়ে দিলে লজ্জার বিষয় হবে। অল্প বয়সে জীবনের যা লক্ষ্য ছিল শ্ৰীনিকেতনে শান্তিনিকেতনে তা সম্পূর্ণ সিদ্ধ না হোক, সাধনার পথ অনেকখানি প্রশস্ত করেছি। নিজের প্রজাদের সম্বন্ধেও আমার অনেক কালের বেদন রয়ে গেছে। মৃত্যুর আগে সে দিককার পথও কি খুলে যেতে পারব না।. এই পরিশিষ্টের শেষ অংশে ধনীর পোশাক আমাদের ছাড়তে হবে, নইলে লজ্জা ঘুচবে না। আমার ভাগ্যবিধাতার আশ্চর্য বিধান এই যে, এখন থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের জীবিকা নিজের চেষ্টায় উপার্জন করতে পারব। —চিঠিপত্র ৩। শ্ৰীপ্রতিম। দেবীকে লিখিত ১৪ অক্টোবর ১৯৩০ এবার রাশিয়ার অভিজ্ঞতায় আমাকে গভীরভাবে অনেক কথা ভাবিয়েছে। প্রচুর উপকরণের মধ্যে আত্মসম্মানের যে বিঘ্ন আছে সেটা বেশ স্পষ্ট চোখে দেখতে পেয়েছি। সেখান থেকে ফিরে এলে মেণ্ডেলদের ঐশ্বর্ষের মধ্যে যখন পৌছলুম, একটুও ভালো লাগল না— ব্রেমেন জাহাজের আড়ম্বর এবং অপব্যয় প্রতিদিন মনকে বিমুখ