পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় 86්ව করেছে। ধনের বোঝা কী প্রকাগু এবং কী অনর্থক। জীবনযাত্রার কত জটিলতা কত সহজেই এড়ানো যেতে পারে। ৩১ অক্টোবর ১৯৩৬ জমিদারির অবস্থা লিখেছিল। যেরকম দিন আসছে তাতে জমিদারির উপরে কোনোদিন আর ভরসা রাখা চলবে না। ও জিনিসটার উপর অনেককাল থেকেই আমার মনে মনে ধিক্কার ছিল, এবার সেটা আরও পাকা হয়েছে। যে-সব কথা বহুকাল ভেবেছি এবার রাশিয়ায় তার চেহারা দেখে এলুম। তাই জমিদারি ব্যবসায়ে আমার লজ্জা বোধ হয় । আমার মন আজ উপরের তলার গদি ছেড়ে নীচে এসে বসেছে। দুঃখ এই যে, ছেলেবেলা থেকে পরোপজীবী হয়ে মানুষ হয়েছি।. এ দিকে দেশের ইতিহাসে একটা নূতন অধ্যায় দেখা দিয়েছে। অনেক কিছু উলটপালট হবে। এই সময়ে বোঝা যত হালকা করতে পারব সমস্যা ততই সহজ হবে। জীবনযাত্রাকে গোড়া ঘেষে বদল করবার দিন এল, সেটা যেন অনায়াসে প্রসন্ন মনে করতে পারি। যারা যত বেশি নানা জালে জড়িয়ে আছে তারা তত বেশি কষ্ট পাবে । দুঃখের দিন যখন আসে তখন তাকে দায়ে পড়ে মেনে নেওয়ার চেয়ে এগিয়ে গিয়ে মেনে নেওয়া ভালো— তাতে দুঃখের ভার কমে যায়— বৃথা ঝুটোপুটি করতে হয় না। ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দুঃখ সকলকেই পেতে হবে— এখনি পাচ্ছে, সংকট এড়িয়ে আরামে থাকবার প্রত্যাশা করাই ভুল। নূতন অভ্যাসের সঙ্গে নিজেকে বনিয়ে নেওয়া কিছুই শক্ত নয়, যদি অস্তরের দিকে প্রস্তুত হয়ে থাকি, যদি পুরাতনের বঁাধন আপনা হতে আলগা করে দিই— টানাটানি করতে গেলেই বাধন হয়ে ওঠে ফাসি । ...এটা খুব করে বুঝেছি, আমাদের সব চেয়ে বড়ো কাজ শ্ৰীনিকেতনে। সমস্ত দেশকে কী করে বাচাতে হবে ঐখানে ছোটো আকারে তারই নিম্পত্তি করা আমাদের ব্ৰত। যদি তুই রাশিয়ায় আসতিস এ সম্বন্ধে অনেক তোর অভিজ্ঞতা হত। যাই হোক, কিছু মালমসলা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছি, দেশে গিয়ে আলোচনা করা যাবে। নিজেদের কথা সম্পূর্ণ ভুলতে হবে ; তার চেয়ে বড়ো কথা সামনে এসেছে। ২১ নভেম্বর ১৯৩e তোরা রাশিয়ায় যদি আসতিস তা হলে বুঝতে পারতিস কাজ করবার ঢের আছে। কম টাকা হলেও চলে যদি বুদ্ধি থাকে ও উদ্যম থাকে, যদি নিজের উপরে ভরসা থাকে । 驛 —চিঠিপত্র ২। শ্রীরথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে লিখিত