পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পত্রপুট তার আবেগে বহে নিয়ে গেছে সর্বগৃধ্ৰ, চেতনাকে জগতের সর্বদানযজ্ঞের প্রাঙ্গণে । এই চিরচঞ্চল চিন্ময় পল্লবের অশ্রুত মর্মরধ্বনি উধাও করে দেয় আমার জাগ্রত স্বপ্নকে চিল-উড়ে-যাওয়া দূর দিগন্তে জনহীন মধ্যদিনে মৌমাছির-গুঞ্জন-মুখর অবকাশে। হাত-ধরে-বসে-থাকা বাষ্পাকুল নির্বাক্‌ ভালোবাসায় নেমে আসে এদেরই স্যামল ছায়ার করুণা। এদেরই মৃত্যুবীজন এসে লাগে শয্যাপ্রান্তে নিদ্রিত দয়িতার নিশ্বাসফুরিত বক্ষের চেলাঞ্চলে। প্রিয়প্রত্যাশিত দিনের চিরায়মান উৎকণ্ঠিত প্রহরে শিহর লাগাতে থাকে এদেরই দোলায়িত কম্পনে । বিশ্বভুবনের সমস্ত ঐশ্বর্যের সঙ্গে আমার যোগ হয়েছে মনোবৃক্ষের এই ছড়িয়ে-পড়া রসলোলুপ পাতাগুলির সম্বেদনে। এরা ধরেছে স্বক্ষকে, বস্তুর অতীতকে ; এরা তাল দিয়েছে সেই গানের ছন্দে যার স্বর যায় না শোনা । এরা নারীর হৃদয় থেকে এনে দিয়েছে আমার হৃদয়ে প্রাণলীলার প্রথম ইন্দ্রজাল আদিযুগের, অনন্ত পুরাতনের আত্মবিলাস নব নব যুগলের মায়ারূপের মধ্যে । এর স্পন্দিত হয়েছে পুরুষের জয়শঙ্খধ্বনিতে মর্তলোকে যার আবির্ভাব মৃত্যুর আলোকে আপন অমৃতকে উদবারিত করবার জন্যে দুর্দাম উদ্যমে, জল-স্থল-আকাশ-পথে দুর্গমজয়ের স্পর্ধিত যার অধ্যবসায় । \9):ò