পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিক 34 আজ মেঘলা দিনের সকালে শুনতে পাচ্ছি, সেই ভিতরের কথাটা কেবলই বন্ধ দরজার শিকল নাড়ছে । ভাবছি, "কী করি । কে আছে যার ডাকে কাজের বেড়া ডিঙিয়ে এপনি আমার বাণী স্বরের প্রদীপ হাতে বিশ্বের অভিলারে বেরিয়ে পড়বে । কে আছে যার চোখের একটি ইশারায় আমার সব ছড়ানো ব্যথা এক মূহূর্তে এক আনন্দে গাথা হবে, এক আলোতে জলে উঠবে। আমার কাছে ঠিক স্বরটি লাগিয়ে চাইতে পারে যে আমি তাকেই কেবল দিতে পারি। সেই আমার সর্বনেশে ভিখারি রাস্তার কোন মোড়ে ।” আমার ভিতরমহলের ব্যথা আজ গেরুয়াবসন পরেছে। পথে বাহির হতে চায়, সকল কাজের বাহিরের পথে, যে পথ একটিমাত্র সরল তারের একতারার মতো, কোন মনের মাহুষের চলায় চলায় বাজছে । বাণী ফোটা ফোটা বৃষ্টি হয়ে আকাশের মেঘ নামে, মাটির কাছে ধরা দেবে ব'লে । তেমনি কোথা থেকে মেয়েরা আসে পৃথিবীতে বাধা পড়তে । তাদের জন্ত অল্প জায়গার জগং, অল্প মাহুষের । ঐটুকুর মধ্যে আপনার সবটাকে ধরনে চাই— আপনার সব কথা, সব ব্যর্থ, সব ভাবনা । তাই তাদের মাথায় কাপড়, ছাতে কঁ:কন, আঙিনায় বেড়া। মেয়েরা হল সীমাস্বর্গের ইন্দ্রাণী । কিন্তু, কোন দেবতার কৌতুকস্থাস্তের মতো অপরিমিত চঞ্চলতা নিয়ে আমাদের পাড়ায় ঐ ছোটো মেয়েটির জন্ম । মা তাকে রেগে বলে “দস্তি", বাপ তাকে ছেলে বলে "পাগলি । সে পলাতক ঝরনার জল, শাসনের পাখর ডিঙিয়ে চলে । তার মনটি যেন বেণুবনের উপরডালের পাতা, কেবলই কিন্তু কিবু করে কপিছে। २ আজ দেখি, সেই স্বয়ন্ত মেয়েটি বারান্দা রেলিঙে ভর দিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে, বাদলশেষের ইশ্রধন্থটি বললেই হয় । তার বড়ো বড়ো ছুটি কালো চোখ আজ আচঞ্চল, তমালের ভালে বৃষ্টির দিনে ভানাভেজা পাখির মতো । ওকে এমন স্তজ কখনো দেখি নি। মনে হল, নদী বেন চলতে চলতে এক জায়গায় এসে থমকে সরোষয় হয়েছে।

  • ©¡o