পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S9 রবীন্দ্র-রচনাবলী NO কিছুদিন আগে রেীত্রের শাসন ছিল প্রখর ; দিগন্তের মুখ বিবৰ্ণ ; গাছের পাতাগুলো শুকনো, হলদে, হতাশ্বাস । এমন সময় হঠাৎ কালো আলুথালু পাগলা মেঘ আকাশের কোণে কোণে তাবু, ফেললে । সূর্যাস্তের একটা রক্তরশ্মি খাপের ভিতর থেকে তলোয়ারের মতো বেরিয়ে এল । অর্ধেক রাত্রে দেখি, দরজাগুলো খড় খড়, শব্দে কঁপিছে । সমস্ত শহরের ঘুমটাকে ঝড়ের হাওয়া ঝুটি ধরে বাকিয়ে দিলে । r উঠে দেখি, গলির আলোটা ঘন বৃষ্টির মধ্যে মাতালের ঘোলা চোখের মতো দেখতে। আর, গির্জের ঘড়ির শব্দ এল যেন বৃষ্টির শব্দের চাদর মুড়ি দিয়ে । সকালবেলায় জলের ধারা আরও ঘনিয়ে এল, রৌদ্র আর উঠল না । 8 এই বাদলায় আমাদের পাড়ার মেয়েটি বারান্দার রেলিঙ ধরে চুপ করে দাড়িয়ে । তার বোন এসে তাকে বললে, “মা ডাকছে।” সে কেবল সবেগে মাথা নাড়ল, তার বেশী উঠল দুলে ; কাগজের নৌকো নিয়ে তার ভাই তার হাত ধরে টানলে । সে হাত ছিনিয়ে নিলে। তবু তার ভাই খেলার জন্তে টানাটানি করতে লাগল। তাকে এক থাপড় বসিয়ে দিলে । Q. বৃষ্টি পড়ছে। অন্ধকার আরও ঘন হয়ে এল । মেয়েটি স্থির দাড়িয়ে । আদিযুগে স্বাক্টর মুখে প্রথম কথা জেগেছিল জলের ভাষায়, হাওয়ার কণ্ঠে । লক্ষকোটি বছর পার হয়ে সেই স্মরণবিস্মরণের অতীত কথা আজ বাদলার কলম্বরে ঐ মেয়েটিকে এসে ডাক দিলে । ও তাই সকল বেড়ার বাইরে চলে গিয়ে হারিয়ে গেল । কত বড়ো কাল, কত বড়ো জগৎ, পৃথিবীতে কত যুগের কত জীবলীলা ! সেই স্বদূর, সেই বিরাট, আজ এই দুরন্ত মেয়েটির মুখের দিকে তাকালো মেঘের ছায়ায়, বৃষ্টির কলশব্দে । ও তাই বড়ো বড়ো চোখ মেলে নিন্তন্ধ দাড়িয়ে রইল, যেন অনন্তকালেরই প্রতিমা ।