পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

పెb* রবীন্দ্র-রচনাবলী NV এমন সময়ে নববর্ষ ছায়া-উত্তরীয় উড়িয়ে পূর্বদিগন্তে এসে উপস্থিত। উজয়িনীর কবির কথা মনে পড়ে গেল। মনে হল, প্রিয়ার কাছে দূত পাঠাই । আমার গান চলুক উড়ে, পাশে থাকার স্বদুর দুর্গম নির্বাসন পার হয়ে যাক । কিন্তু, তা হলে তাকে যেতে হবে কালের উজান-পথ বেয়ে বাশির ব্যথায় ভরা আমাদের প্রথম মিলনের দিনে, সেই আমাদের যে দিনটি বিশ্বের চিরবর্ষা ও চিরবসন্তের সকল গন্ধে সকল ক্ৰন্দনে জড়িয়ে রয়ে গেল, কেতকীবনের দীর্ঘশ্বাসে আর শালমঞ্জরীর উতলা আত্মনিবেদনে । নির্জন দিঘির ধারে নারিকেলবনের মর্মরমুখরিত বর্ষার আপন কথাটিকেই আমার কথা করে নিয়ে প্রিয়ার কানে পৌছিয়ে দিক, যেখানে সে তার এলোচুলে গ্রন্থি দিয়ে, আঁচল কোমরে বেঁধে সংসারের কাজে ব্যস্ত । 8 বহু দূরের অসীম আকাশ আজ বনরাজিনীলা পৃথিবীর শিয়রের কাছে নত হয়ে পড়ল । কানে কানে বললে, “আমি তোমারই ।” পৃথিবী বললে, “সে কেমন করে হবে । তুমি যে অসীম, আমি যে ছোটো " . আকাশ বললে, “আমি তো চার দিকে আমার মেঘের সীমা টেনে দিয়েছি।” পুথিবী বললে, “তোমার যে কত জ্যোতিষ্কের সম্পদ, আমার তো আলোর সম্পদ নেই।” আকাশ বললে, “আজ আমি আমার চন্দ্র স্বৰ্ষ তারা সব হারিয়ে ফেলে এসেছি, আজ আমার একমাত্র তুমি আছ।” - পৃথিবী বললে, “আমার অশ্রুভরা হৃদয় হাওয়ায় হাওয়ায় চঞ্চল হয়ে কাপে, তুমি ষে অবিচলিত ।” আকাশ বললে, “আমার অশ্রও আজ চঞ্চল হয়েছে, দেখতে কি পাও নি। আমার বক্ষ আজ শুামল হল তোমার ঐ হামল হৃদয়টির মতো।” সে এই বলে আকাশ-পৃথিবীর মাঝখানকার চিরবিরহটাকে চোখের জলের গান দিয়ে ভরিয়ে দিলে । Q সেই আকাশ-পৃথিবীর বিবাহমন্ত্রগুপ্পন নিয়ে নববর্ষা নামুক আমাদের বিচ্ছেদের পরে। প্রিয়ার মধ্যে বা অনির্বচনীয় তাই হঠাং-বেজে-ওঠা বীণার তারের মতো