পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিক e లి গলিট অভিভূত হয়ে বলে, “ছিল খট্‌খটে শুকনো, কোনো বালাই ছিল না। কিন্তু, কেন অকারণে এই ধারাবাহী উৎপাত।” * ফাঙ্কনে দক্ষিণের হাওয়াকে গলির মধ্যে লক্ষ্মীছাড়ার মতো দেখতে হয় ; ধুলো আর ছেড়া কাগজগুলো এলোমেলে উড়তে থাকে । গলি হতবুদ্ধি হয়ে বলে, “এ কোন পাগলা দেবতার মাংলামি ।” তার ধারে ধারে প্রতিদিন যে-সব আবর্জন এসে জমে— মাছের আঁশ, চুলোর ছাই, তরকারির খোল, মরা ইঙ্কুর, লে জানে এই-সব হচ্ছে বাস্তব। কোনোদিন ভুলেও ভাবে না, “এ সমস্ত কেন।” অথচ, শরতের রোন্ধের যখন উপরের বারান্দায় আড় হয়ে পড়ে, যখন পুজোর নহবত ভৈরবীতে বাজে, তখন ক্ষণকালের জন্তে তার মনে হয়, “এই শানবাধা লাইনের বাইরে মস্ত একটা কিছু আছে বা !” এ দিকে বেলা বেড়ে যায় ; ব্যস্ত গৃহিণীর স্বাচলটার মতো বাড়িগুলোর কাধের উপর থেকে রোদ্ধরধান গলির ধারে খসে পড়ে ; ঘড়িতে ন’টা বাজে ; ঝি কোমরে ঝুড়ি করে বাজার নিয়ে আসে ; রায়ার গদ্ধে আর ধোয়ায় গলি ভরে ষায় ; যারা জাপিলে যায় তারা ব্যস্ত হতে থাকে । গলি তখন আবার ভাবে, “এই শানবাধা লাইনের মধ্যেই সব সত্য। জার, যাকে মনে ভাবছি মস্ত একটা কিছু লে মস্ত একটা স্বপ্ন ।” একটি চাউনি গাড়িতে ওঠবার সময় একটুখানি মুখ ফিরিয়ে সে আমাকে তার শেষ চাউনিটি দিয়ে গেছে । এই মস্ত সংসারে ঐটুকুকে আমি রাখি কোনখানে । দও পল মুহূর্ত অহরহ পা ফেলবে না, এমন একটু জায়গা আমি পাই কোথায় । মেঘের সকল সোনার রঙ যে সন্ধ্যায় মিলিয়ে ধায় এই চাউনি কি সেই সন্ধ্যায়। মিলিয়ে যাবে। নাগকেশরের সকল সোনালি রেণু ৰে বৃষ্টিতে ধুয়ে বায় এও কি সেই বুষ্টতেই ঘুরে যাবে। সংসায়ের হাজার জিনিসের মাঝখানে ছড়িয়ে থাকলে এ থাকবে কেন— হাজার কথার আবর্জনা, হাজার বেদনার সূপে।