পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

YX e রবীন্দ্র-রচনাবলী হিতৈষী একটা কথা ভালো করে ভেবে দেখে না, গল্পরচনার মেশাই হচ্ছে স্বষ্টিকর্তার সবশেষের নেশা । তাকে শোধন করতে না পারলে মানুষকে শোধন করার আশা করা যায় না । একদিন তিনি তার কারখানাঘরে আগুন থেকে জল, জল থেকে মাটি গড়তে লেগে গিয়েছিলেন। স্বষ্টি তখন গলদঘর্ম, বাষ্পভারাকুল। ধাতুপাথরের পিণ্ডগুলো তখন থাকে থাকে গাথা হচ্ছে ; চার দিকে মাল মসলা ছড়ানো আর দমাদম পিটনি । সেদিন বিধাতাকে দেখলে কোনোমতে মনে করা যেতে পারত না যে, তার মধ্যে কোথাও কিছু ছেলেমানুষি আছে । তখনকার কাণ্ডকারখানা যাকে বলে ‘সারবান’ । তার পরে কখন শুরু হল প্রাণের পত্তন। জাগল ঘাস, উঠল গাছ, ছুটল পশু, উড়ল পাখি । কেউ বা মাটিতে বাধা থেকে আকাশে অঞ্জলি পেতে দাড়াল, কেউ বা ছাড়া পেয়ে পৃথিবীময় আপনাকে বহুধা বিস্তার করে চলল, কেউ বা জলের যবনিকাতলে নিঃশব্দ নৃত্যে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করতে ব্যস্ত, কেউ বা আকাশে ডানা মেলে স্বর্যালোকের বেদীতলে গানের অর্ঘ্যরচনায় উংস্থক । এখন থেকেই ধরা পড়তে লাগল বিধাতার মনের চাঞ্চল্য । এমন করে বহু যুগ কেটে যায়। হঠাৎ এক সময়ে কোন পেয়ালে স্বইকর্তার কারখানায় উনপঞ্চাশ পবনের তলব পড়ল । তাদের সবক’টাকে নিয়ে তিনি মানুষ গড়লেন । এত দিন পরে আরম্ভ হল তার গল্পের পাল । বহুকাল কেটেছে তার বিজ্ঞানে, কারুশিল্পে ; এইবার তার শুরু হল সাহিত্য । মানুষকে তিনি গল্পে গল্পে ফুটিয়ে তুলতে লাগলেন । পশুপাখির জীবন হল আহার নিদ্রা সন্তানপালন ; মানুষের জীবন হল গল্প । কত বেদনা, কত ঘটনা ; মুখদুঃখ রাগবিরাগ ভালোমন্দের কত ঘাতপ্রতিঘাত। ইচ্ছার সঙ্গে ইচ্ছার, একের সঙ্গে দশের, সাধনার সঙ্গে স্বভাবের, কামনার সঙ্গে ঘটনার সংঘাতে কত আবর্তন । নদী যেমন জলস্রোতের ধারা, মানুষ তেমনি গল্পের প্রবাহ । তাই পরম্পর দেখা হতেই প্রশ্ন এই, “কী হল হে, কী খবর, তার পরে ?” এই তার পরে’র সঙ্গে ‘তার পরে’ বোনা হয়ে পৃথিবী জুড়ে মানুষের গল্প গাথা হচ্ছে। তাকেই বলি জীবনের কাহিনী, তাকেই বলি মামুযের ইতিহাস । বিধাতার-রচ ইতিহাস আর মাহুষের-রচ কাহিনী, এই দুইয়ে মিলে মাহুষের সংসার। মামুষের পক্ষে কেবল-যে অশোকের গল্প, আকবরের গল্পই সত্য তা নয় ; ষে রাজপুত্র সাত-সমুদ্র-পারে সাত-রাজার-ধন মানিকের সন্ধানে চলে সেও সত্য ; আর সেই ভক্তিবিমুগ্ধ হনুমানের সরল বীরত্বের কথাও সত্য যে হহুমান গন্ধমাদনকে