পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS ૨ রবীন্দ্র-রচনাবলী ९ কলকাতার বাসায় দোতলার ঘরে মীচু শুয়ে থাকে । হিন্দুস্থানি দাই কাছে-বলে কত কী বকে ; সে খানিক শোনে, খানিক শোনে না । একদিন সারারাত মীন্থর ঘুম ছিল না। ভোরের আঁধার একটু যেই ফিকে হল লে দেখতে পেলে, তার জানলার নিচেকার গোলকচাপার গাছটি ফুলে ভরে উঠেছে । তার একটু মুছগন্ধ মীন্থর জানলার কাছটিতে এসে যেন জিজ্ঞাসা করলে, “তুমি কেমন আছে ।” ওদের বাসা আর পাশের বাড়িটার অল্প একটুখানি ফাকের মধ্যে ঐ রৌদ্রের কাঙাল গাছটি, বিশ্বপ্রকৃতির এই হাবা ছেলে, কেমন করে এসে প'ড়ে যেন বিভ্রাস্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে । 嘻 ক্লান্ত মীহ্ল বেলায় উঠত। উঠেই সেই গাছটির দিকে চেয়ে দেখত, সেদিনের মতো আর তো তেমন ফুল দেখা যায় না। দাইকে বলত, “আহা দাই, মাথা খা, এই গাছের তলাটি খুড়ে দিয়ে রোজ একটু জল দিস।” এই গাছে কেন-যে কদিন ফুল দেখা যায় নি, একটু পরেই বোঝা গেল । সকালের আলো তখন আধফোটা পদ্মের মতো সবে জাগছে, এমন সময় সাজি হাতে পূজারি ব্রাহ্মণ গাছটাকে ঝাকানি দিতে লাগল, যেন খাজনা আদায়ের জন্তে বর্গির পেয়াদা । মীন্থ দাইকে বললে, “শীঘ্ৰ ঐ ঠাকুরকে একবার ডেকে আন।” ব্রাহ্মণ আসতেই মীমু তাকে প্রণাম করে বললে, “ঠাকুর, ফুল নিচ্ছ কার জন্যে ।” ব্রাহ্মণ বললে, “দেবতার জন্তে ।” মীহ্ল বললে, “দেবতা তো ঐ ফুল স্বয়ং আমাকে পাঠিয়েছেন ।” “তোমাকে !” “হা, আমাকে । তিনি যা দিয়েছেন সে তো ফিরিয়ে নেবেন ব'লে দেন নি।” ব্রাহ্মণ বিরক্ত হয়ে চলে গেল । পরের দিন ভোরে আবার সে যখন গাছ নাড়া দিতে শুরু করলে তখন মীন্থ তার দাইকে বললে, “ও দাই, এ তো আমি চোখে দেখতে পারি নে। পাশের ঘরের জানলার কাছে আমার বিছানা করে দে।”