পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিক b)ఏ স্বর্গের দূত এসে অপরাধ স্বীকার করলে । সে বললে, “আমি ভূল লোককে ভূল স্বর্গে এনেছি।” ভূল লোকটিকে সভায় আনা হল। তার রঙিন পাগড়ি আর কোমরবন্ধের বাহার দেখেই সবাই বুঝলে, বিষম ভুল হয়েছে। সভাপতি তাকে বললে, “তোমাকে পৃথিবীতে ফিরে যেতে হবে।” লে তার রঙের ঝুলি আর তুলি কোমরে বেঁধে হাফ ছেড়ে বললে, “তবে চললুম।” মেয়েটি এসে বললে, “আমিও যাব ।” প্রবীণ সভাপতি কেমন অন্তমনস্ক হয়ে গেল । এই সে প্রথম দেখলে এমন-একটা কাও যার কোনো মানে নেই। রাজপুত্ত্বর ck রাজপুত্তর চলেছে নিজের রাজ্য ছেড়ে, সাত রাজার রাজ্য পেরিয়ে, যে দেশে কোনো রাজার রাজ্য নেই সেই দেশে । সে হল যে কালের কথা সে কালের আরম্ভও নেই, শেষও নেই । শহরে গ্রামে আর-সকলে হাটবাজার করে, ঘর করে, ঝগড়া করে ; যে আমাদের চিরকালের রাজপুত্তর লে রাজ্য ছেড়ে ছেড়ে চলে যায়। কেন যায় । কুয়োর জল কুয়োতেই থাকে, খাল বিলের জল খাল বিলের মধ্যেই শাস্ত । কিন্তু, গিরিশিখরের জল গিরিশিখরে ধরে না, মেঘের জল মেঘের বাধন মানে না । রাজপুত্তরকে তার রাজ্যটুকুর মধ্যে ঠেকিয়ে রাখবে কে । তেপান্তর মাঠ দেখে সে ফেরে না, সাতসমূদ্র তেরোনদী পার হয়ে যায়। মানুষ বারে বারে শিশু হয়ে জন্মায় আর বারে বারে নতুন ক’রে এই পুরাতন কাহিনীটি শোনে। সন্ধ্যাপ্রদীপের আলো স্থির হয়ে থাকে, ছেলেরা চুপ করে গালে হাত দিয়ে ভাবে, “আমরা সেই রাজপুত্র।” তেপান্তর মাঠ যদি বা ফুরোয়, সামনে সমুত্র। তারই মাঝখানে দ্বীপ, সেখানে দৈত্যপুরীতে রাজকন্যা বাধা আছে। পৃথিবীতে আর-সকলে টাকা খুজছে, নাম খুঁজছে, আরাম খুজিছে, আর যে আমাদের রাজপুত্তর সে দৈত্যপুরী থেকে রাজকতাকে উদ্ধার করতে বেরিয়েছে। তুফান উঠল, নেীকে মিলল না, তবু সে পথ খুঁজছে ।