পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>&● রবীন্দ্র-রচনাবলী এইটেই হচ্ছে মানুষের সব-গোড়াকার রূপকথা আর সব-শেষের। পৃথিবীতে যারা নতুন জন্মেছে দিদিমার কাছে তাদের এই চিরকালের খবরটি পাওয়া চাই যে, রাজকন্যা বন্দিনী, সমুদ্র দুর্গম, দৈত্য দুৰ্জয়, আর ছোটো মানুষটি একলা দাড়িয়ে পণ করছে, “বন্দিনীকে উদ্ধার করে আনব ।” বাইরে বনের অন্ধকারে বৃষ্টি পড়ে, ঝিল্লি ডাকে, আর ছোটো ছেলেটি চুপ করে গালে হাত দিয়ে ভাবে, “দৈত্যপুরীতে আমাকে পাড়ি দিতে হবে।” २ সামনে এল অসীম সমুদ্র, স্বপ্নের-ঢেউ-তোলা নীল ঘুমের মতো । সেখানে রাজপুত্তর ঘোড়ার উপর থেকে নেমে পড়ল । কিন্তু, যেমনি মাটিতে পা পড়া আমনি এ কী হল। এ কোন জাদুকরের জাদু। এ যে শহর । ট্রাম চলেছে । আপিসমুখো গাড়ির ভিড়ে রাস্তা দুর্গম । তালপাতার বাশি -ওয়ালা গলির ধারে উলঙ্গ ছেলেদের লোভ দেখিয়ে বঁশিতে ফু দিয়ে চলেছে । আর, রাজপুত্তরের এ কী বেশ। এ কী চাল । গায়ে বোতামপোলা জাম, ধুতিটা খুব সাফ নয়, জুতোজোড়া জীর্ণ। পাড়াগায়ের ছেলে, শহরে পড়ে, টিউশানি করে বাসাখরচ চালায় । রাজকন্যা কোথায় । তার বাসার পাশের বাড়িতেই । চাপাফুলের মতো রঙ নয়, হাসিতে তার মানিক খসে না । আকাশের তারার সঙ্গে তার তুলনা হয় না, তার তুলনা নববর্ষার ঘাসের আড়ালে যে নামহারা ফুল ফোটে তারই সঙ্গে । মা-মরা মেয়ে বাপের আদরের ছিল । বাপ ছিল গরিব, অপাত্রে মেয়ের বিয়ে দিতে চাইল না, মেয়ের বয়স গেল বেড়ে, সকলে নিন্দে করলে । বাপ গেছে মরে, এখন মেয়ে এসেছে খুড়োর বাড়িতে । পাত্রের সন্ধান মিলল। তার টাকাও বিস্তর, বয়সও বিস্তর, আর নাতিনাৎনির ংখ্যাও অল্প নয়। তার দাবরাবের সীমা ছিল না । খুড়ো বললেন, মেয়ের কপাল ভালো । এমন সময় গায়ে-হলুদের দিনে মেয়েটিকে দেখা গেল না, আর পাশের বাসার সেই ছেলেটিকে ।